ভারত-শাসিত কাশ্মীরে এক প্রাণঘাতী হামলার পর নয়াদিল্লির সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছে শীর্ষ মিত্ররাষ্ট্রগুলো। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন সৌদি আরব, মিশর, ইরান ও চীনের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা। অন্যদিকে ডজনেরও বেশি বিশ্ব নেতার সাথে যোগাযোগ করেছে ভারত।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বছরের পর বছর ধরে টানাপোড়েনের মধ্যে সর্বনিম্নে পৌছেছে। ২০১৯ সাল থেকে চরম সংকটে নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের সম্পর্ক। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরে ২৬ জনকে হত্যার পর তদন্ত ছাড়াই সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। পাকিস্তান জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য ও স্বচ্ছ তদন্তে অংশ নিতে প্রস্তুত।
উভয় পক্ষই সম্পর্ক হ্রাস করার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। ভারত সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করেছে, ভারতীয় বিমানের জন্য পাকিস্তান নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের সীমান্তের কাছে ভারতের সীমিত বিমান হামলা বা বিশেষ বাহিনীর অভিযান চালানোর আশঙ্কাও বাড়ছে, যা পারমাণবিক অস্ত্রধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীদের সর্বাত্মক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার (২৬ এপ্রিল) পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার কূটনৈতিক সমর্থন সংগ্রহের জন্য মিশর, তুর্কি ও সৌদি আরবের সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি বর্তমান আঞ্চলিক পরিস্থিতি সম্পর্কে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়েকে অবহিত করেছেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ‘তিনি ভারতের একতরফা ও অবৈধ পদক্ষেপ, সেইসাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ভিত্তিহীন প্রচারণাকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় কূটনীতিক আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করার এবং ‘একতরফাবাদ ও আধিপত্যবাদী নীতি’র যৌথ বিরোধিতা করতে তাদের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ‘তারা অঞ্চল ও তার বাইরে শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের তাদের ভাগ করা লক্ষ্যগুলোকে এগিয়ে নিতে সকল স্তরে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের পাশাপাশি সমন্বয় বজায় রাখতে সম্মত হয়েছেন’।
চীন ও ভারতের নিজস্ব সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘ দিনের বিরোধ রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা নিয়ে বেইজিং ও নয়াদিল্লির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান।
শনিবার ইসহাক দার সৌদি আরব, মিশর ও তুর্কস্কের সাথে একই রকম আলোচনা করেছেন। এদিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সাথেও কথা বলেছেন যে, ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তেহরানের যেকোনো প্রচেষ্টাকে তিনি স্বাগত জানাবেন।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক ডজনেরও বেশি বিশ্ব নেতার সাথে যোগাযোগ করেছেন। এবং নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ১০০টি মিশনের কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের জন্য ডাকা হয়েছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে না। আলোচনা সম্পর্কে অবগত চারজন কূটনৈতিক কর্মকর্তার মতে, নয়াদিল্লি তার প্রতিবেশী ও প্রধান শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য মামলা তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে।’
পেহেলগামে হামলার পর নয়াদিল্লি পাকিস্তানের সাথে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি একতরফাভাবে স্থগিত, প্রতিরক্ষা কর্মীদের প্রত্যাহার, পাকিস্তানের সাথে প্রধান স্থল আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করার ঘোষণা, কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য বিশেষ ‘সার্ক’ ভিসা বাতিল করেছে।
প্রতিক্রিয়ায় ইসলামাবাদ ভারতীয় কূটনীতিক ও সামরিক উপদেষ্টাদের বহিষ্কার, শিখ তীর্থযাত্রীদের বাদ দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের ভিসা বাতিল এবং তাদের দিক থেকে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
পাকিস্তান বলেছে, সিন্ধু নদী থেকে পানি প্রবাহ বন্ধ করার জন্য ভারতের যেকোনো প্রচেষ্টাকে ‘যুদ্ধের পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখা হবে এবং ‘জাতীয় শক্তির পূর্ণ শক্তি’ দিয়ে জবাব দেওয়া হবে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, শনিবার টানা তৃতীয় রাতে বিতর্কিত কাশ্মীরে পাকিস্তান ও ভারতের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে, সেখানে পাকিস্তান থেকে ক্ষেপণাস্ত্রও ছোড়া হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। উভয় দেশই আংশিকভাবে কাশ্মীর শাসন করলেও সম্পূর্ণরূপে দাবি করে। ইতোমধ্যেই হিমালয়ের এই অঞ্চল নিয়ে দুদেশের মধ্যে দুটি যুদ্ধ হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :