ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

পাকিস্তান আক্রমণের প্রস্তুতিতে ভারত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০২:০০ পিএম
ভারতের শ্রীনগরের ডাল লেকের তীরে একজন ভারতীয় আধাসামরিক সৈনিক ছবি: সংগৃহীত

কাশ্মীরে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পেয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে ফোনে কথা বললেও, বিষয়টি নিরসনের চেষ্টা নয় বরং প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের কৌশল তৈরি করতেই এই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন।

সন্ত্রাসী হামলার পর ভূরাজনৈতিক টানাপোড়েন

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) কাশ্মীরের পাহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিরীহ নাগরিক নিহত হওয়ার পর, ভারত পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করে। যদিও পাকিস্তান সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। হামলার দায় একটি অল্প পরিচিত গোষ্ঠী ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ স্বীকার করলেও, ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি- এটি পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তইবা’র ফ্রন্ট সংগঠন।

ভারতের সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়া

ভারতীয় কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদে অতীত ভূমিকার কথা তুলে ধরেছেন। যদিও হামলার সরাসরি প্রমাণ এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তথাপি ভারতের ভেতরে ও বাইরে আলোচনা চলছে যে ভারত ‘কোনো বড় ধরনের সামরিক প্রতিক্রিয়া’র প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীদি সম্প্রতি এক ভাষণে সরাসরি পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করেই বলেছেন, ‘সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস করে দেওয়া হবে’ এবং ‘তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা কল্পনারও বাইরে।’

নিয়ন্ত্রণ রেখায় গোলাগুলি ও কাশ্মীরে দমন অভিযান

সীমান্তে নিয়মিত গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে, যা পরিস্থিতির সংবেদনশীলতা নির্দেশ করে। কাশ্মীরেও বড় পরিসরে ধরপাকড় শুরু করেছে ভারতীয় বাহিনী। শতাধিক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে, ভারত পাকিস্তানে প্রবাহিত পানির উৎস রোধের হুমকি দিয়েছে এবং পাকিস্তানের দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তা ও ভিসাধারী নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাকিস্তানও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও নীরবতা

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইরান-সৌদি আরব শান্তির আহ্বান জানালেও, যুক্তরাষ্ট্র সহ বড় শক্তিগুলো এই সংকটে খুব একটা সক্রিয় নয়। ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইকে সমর্থন জানালেও, দক্ষিণ এশিয়া এখন তাদের অগ্রাধিকারের শীর্ষে নেই বলেই মনে হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক চাপের অভাবে ভারত এখন তুলনামূলকভাবে স্বাধীনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছে। পূর্বের মতো এবারও ভারতের প্রতিশোধমূলক আঘাতের পরেই হয়তো কূটনৈতিক সহনশীলতার আহ্বান আসতে পারে।

যুদ্ধের আশঙ্কা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা

বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মার্কি মনে করেন, ভারত-পাকিস্তানের পারমাণবিক ক্ষমতা ও অতীতের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় রেখে এবার আরও নাটকীয় কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে। যদিও ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন মনে করেন, উভয় দেশ পরিচালিত বৈরিতার অবস্থায় স্বস্তিতে রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

কাশ্মীরের সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক প্রতিক্রিয়া, পাকিস্তানের পাল্টা হুঁশিয়ারি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যত নিষ্ক্রিয়তা- সব মিলে দক্ষিণ এশিয়ায় এক ভয়াবহ সংঘর্ষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অতীতে কাশ্মীর ইস্যুতে যুদ্ধ হয়েছে, এবার সেই সংঘর্ষ যদি আবার শুরু হয়, তবে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।