ভারত থেকে পাকিস্তানে নদীর পানি প্রবাহ বন্ধে তিন স্তরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।
শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর ভারতের কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী সিআর পাতিল এ ঘোষণা দেন।
পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিআর পাতিল জানান, ‘অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে একটি রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। বৈঠকে স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার তিনটি বিকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সরকার এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে পাকিস্তানে এক ফোঁটাও পানি না পৌঁছায়।’
তিনি আরও বলেন, খুব শিগগিরই নদী থেকে পলি অপসারণের কাজ শুরু হবে, যার মাধ্যমে পানির প্রবাহ বন্ধ করে অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। এই উদ্যোগকে তিনি ‘ঐতিহাসিক’ এবং ‘জাতীয় স্বার্থে সম্পূর্ণ ন্যায়সঙ্গত’ বলে অভিহিত করেছেন।
এক্স (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে পাতিল লেখেন, ‘আমরা নিশ্চিত করব যে সিন্ধু নদীর এক ফোঁটা পানিও যেন পাকিস্তানে না পৌঁছায়।’
ইন্দাস চুক্তি স্থগিতের পথে ভারত
সিআর পাতিল জানান, ভারত সরকার এখন তিন ধাপের কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদী পর্যায়ে নদীগুলোর পলি অপসারণ করে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হবে। মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণ। যদিও নির্দিষ্ট কারিগরি বিশদ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির (সিসিএস) বৈঠকে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে বলে জানা গেছে।
পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি ও প্রতিক্রিয়া
ভারতের এই পদক্ষেপের কড়া প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিন্ধু পানি চুক্তিকে তাদের ‘২৪ কোটি জনগণের জীবনরেখা’ বলে উল্লেখ করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ভারতীয় এয়ারলাইন্সের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া, ওয়াঘা-আটারি সীমান্তপথে চলাচল বন্ধ, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য স্থগিত এবং সার্ক ভিসা স্কিমের আওতায় ভারতীয় নাগরিকদের (শিখ তীর্থযাত্রী ব্যতীত) ভিসা প্রদান বন্ধ করা।
পাকিস্তান আরও জানায়, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ভারতের হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে জানানো হয়, ‘সিন্ধু পানি চুক্তির অধীনে পানির গতিপথ পরিবর্তনের যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে। ভারতকে তার রাজনৈতিক স্বার্থে পহেলগাম হামলার মতো ঘটনাকে ব্যবহারের নীতিহীনতা থেকে বিরত থাকতে হবে।’
বর্তমানে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে, যেখানে পানির ইস্যু বিরোধের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।