ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

কানাডার আগাম নির্বাচন

চতুর্থবারের মতো লিবারেল পার্টির সরকার গঠন  

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২৫, ১০:৪৯ এএম
লিবারেল পার্টির সদর দপ্তরে সমর্থকদের উল্লাস। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী মার্ক কারনির নেতৃত্বে কানাডার লিবারেল পার্টি অনুষ্ঠিত ফেডারেল নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে, যা একটি নাটকীয় এবং বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তনের চিত্র তুলে ধরে। 

এই বিজয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কানাডার প্রতি একত্রীকরণের হুমকি এবং বাণিজ্য যুদ্ধ।

সোমবার (২৯ এপ্রিল স্থানীয় সময়) ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, লিবারেলরা পার্লামেন্টের ৩৪৩টি আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তবে তারা পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (অন্তত ১৭২ আসন) পাবে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়। প্রয়োজনে ছোট দলগুলোর সহায়তা নিতে হতে পারে সরকার গঠন ও আইন পাসের জন্য।

ডিসেম্বরে লিবারেল পার্টি যখন একপ্রকার রাজনৈতিকভাবে মৃতপ্রায়, তখন ট্রাম্পের আক্রমণ কানাডিয়ানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং একটি জাতীয়তাবাদী জোয়ার তৈরি হয়, যা লিবারেলদের সমর্থনে রূপ নেয়।

সাবেক বিচারমন্ত্রী ডেভিড লামেট্টি বলেন, ‘ডিসেম্বরে আমরা প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম। এখন আমরা সরকার গঠন করতে যাচ্ছি। এটি সম্ভব হয়েছে কারনির কারণে।’

অপরদিকে কনজারভেটিভ নেতা পিয়েরে পলিয়েভ চেষ্টা করেছিলেন এই নির্বাচনকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর বিরুদ্ধে গণভোটে পরিণত করতে। তবে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ, ট্রুডোর পদত্যাগ এবং দুইবারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকার মার্ক কারনির নেতৃত্বে লিবারেল পার্টির পুনরুত্থান ঘটে।

নির্বাচনের দিনও, ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে কানাডিয়ানদের উদ্দেশে বলেন, কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়া উচিত এবং দাবি করেন, মার্কিন করদাতারা কানাডাকে ভর্তুকি দেয়। 

এ ধরনের বক্তব্যে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হন কানাডিয়ানরা। অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বাতিল করেন, মার্কিন পণ্য বর্জনের ডাক দেন, এমনকি আগাম ভোটও দেন। এবার আগাম ভোটের সংখ্যা ছিল রেকর্ড ৭৩ লাখ।

কানাডায় সাধারণ নির্বাচনে জয় পেল ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি

মার্ক কারনি বলেন, ‘আমাদের ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে আমাদের দখল নেওয়া যায়। এটি কেবল রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বাস্তব হুমকি।’

টরন্টোর বাসিন্দা রেইড ওয়ারেন বলেন, ‘পলিয়েভ আমার কাছে ছোট ট্রাম্পের মতো শোনায়। তাই আমি লিবারেলদের ভোট দিয়েছি।’

ঐতিহাসিক রবার্ট বথওয়েল বলেন, ‘পলিয়েভ ও ট্রাম্প একই ধরনের অভিযোগ ও ঘৃণার ওপর ভিত্তি করে প্রচার চালিয়েছেন, কিন্তু এটি কানাডায় ভোটারদের বিপরীতে গেছে।’

১৯৮৮ সালের পর এই প্রথম কোনো নির্বাচনে বিদেশনীতি এতটা প্রভাব ফেলেছে। তখনো মূল ইস্যু ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য।

এদিকে কানাডা এখন শুধু বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, বরং চরম মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়সংকটের মুখোমুখি। কানাডার ৭৫ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে যায়, ফলে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও শিল্প দক্ষিণে স্থানান্তরের হুমকি অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

কারনি তার প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে আদায় করা প্রতিশোধমূলক শুল্কের প্রতিটি ডলার ব্যবহার করা হবে ক্ষতিগ্রস্ত কানাডিয়ান শ্রমিকদের সহায়তায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘দাঁতের চিকিৎসা সুবিধা চালু থাকবে, মধ্যবিত্তের কর হ্রাস করা হবে, অভিবাসন হার নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় আনা হবে এবং সরকারি সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য অর্থায়ন বাড়ানো হবে।’