গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। আর এর শতভাগ দায় ইসরাইলের।
এমনকি ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করে গণহত্যা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি।
প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল নিখুঁত পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজাবাসীদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। ইচ্ছাকৃতভাবে ওই অঞ্চলে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি করেছে।
তারা সামাজিক মাধ্যমে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েল গাজার ফিলিস্তিনিদের নির্মূলে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে, যা গণহত্যার সমতুল্য।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমান্তে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালান। সে হামলায় ১ হাজার ২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক মানুষ।
এর পাশাপাশি, হামাসের হাতে বন্দি হন ২৫১ জন ব্যক্তি, যাদের ৫৮ জন এখনো গাজায় আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তাদের মধ্যে ৩৪ জন এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন বলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে। এ হামলার প্রতিশোধ নিতে সেদিনই গাজায় নির্বিচার ও গণহত্যামূলক হামলা শুরু করে ইসরাইল।
দুই দফায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি চালু থাকলেও দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলমান এ হামলায় ৫২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ।
ইসরায়েল জেনে-বুঝে এক নজিরবিহীন মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে এ মানবাধিকার সংস্থা।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অপরাধ করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে জিম্মি করে।
এরপর থেকেই লাইভ স্ট্রিমিংয়ে প্রচারিত (ইসরায়েলি) গণহত্যার দর্শক হতে বাধ্য হচ্ছে বিশ্ব।’
ইসরায়েল যখন হাজারো ফিলিস্তিনিকে হত্যা করছে, কয়েক প্রজন্মের মানুষসহ সমগ্র পরিবারকে নির্মূল করছে, বাড়িঘর, জীবন-জীবিকা, হাসপাতাল ও স্কুল ধ্বংস করছে, তখন গোটা বিশ্ব ক্ষমতাহীন হয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরাইয়েলের সামরিক অভিযান গাজার বেশির ভাগ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত, গৃহহীন, ক্ষুধার্ত করেছে। তাদের প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে ফেলেছে। চিকিৎসা সেবা, বিদ্যুৎ ও খাওয়ার পানি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের পুরো সময়ে ইসরায়েলের একাধিক যুদ্ধাপরাধের বিস্তারিত তথ্য নথিবদ্ধ করেছে তারা । এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক মানুষ ও স্থাপনায় সরাসরি হামলা এবং নির্বিচার ও মাত্রা ছাড়ানো হামলার ঘটনা।
ইসরায়েলের অভিযান ১৯ লাখ ফিলিস্তিনিকে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করেছে, যা গাজার জনসংখ্যার ৯০ শতাংশের সমান।
তবে, অ্যামনেস্টি, অন্যান্য অধিকার সংস্থাসহ কয়েকটি দেশ একই অভিযোগ আনলেও গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে ইসরায়েল।
সূত্র: এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :