ঢাকা বুধবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫

পাকিস্তানে যেকোনো সময় হামলা করবে ভারত

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫, ১২:২৯ এএম
পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ। গ্রাফিক্স : সংগৃহীত

কাশ্মীর ইস্যুতে কোনোরকম তদন্ত ছাড়াই পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয় ভারত। এরপর গত কয়েকদিনে ইসলামাবাদকে জব্দ করার নানা কূটনৈতিক কৌশল নিয়েছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় একগুচ্ছ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ। এর মধ্যে অন্যতম সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা। ফলে দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা আরও উসকে দিয়েছে মোদি সরকার। এতে করে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশে বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামা।

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে শায়েস্তা করতে ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিজেরা প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।

দু’দিন আগেও এক ভাষণে মোদি বলেছিলেন, ‘ভারতীয়দের রক্ত টগবগ করছে’। এবার সেই ঝাঁজ মেটানোর অনুমতি দিয়ে দিলেন তিনি। পেহেলগামে হামলার জবাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। ফলে এখন যেকোনো সময় পাকিস্তানে হামলা চালাতে পারবে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি অনলাইন এ খবর জানায়।

তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৩০ মিনিট) পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।

পাকিস্তানে কখন, কোথায় এবং কীভাবে হামলা করতে হবে— তা নির্ধারণ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) একটি জরুরি বৈঠকে এই হুকুম দেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবৎও। যদিও তিনি সরকারি কোনো পদে নেই। আরএসএস একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

নিয়ম অনুযায়ী, ভারত সরকার কোনো বড় পরিকল্পনা করলে সেটা সম্পর্কে তাকে অবহিত করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম। আরএসএস বিজেপির আদর্শগত ভিত্তি। যেকোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আরএসএস-কে অবহিত করাটা বিজেপির অঘোষিত রীতি। প্রধানমন্ত্রীর ও ভাগবতের সাক্ষাতের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি?

গত ২২ এপ্রিলে পেহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহতের পর কাশ্মীরজুড়ে চলছে সেনাবাহিনীর অপারেশন। জানা গেছে, ১০০ ‘সন্ত্রাসীকে’ টার্গেট করে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। ওই ঘটনার পর টানা পাঁচ রাত কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তান-ভারত সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তুলছে। এরই মধ্যে উভয় দেশ সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়িয়েছে।

অবশ্য এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় ভারতের বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন অনলাইন জানায়, ভারতীয় কোয়াডকপ্টার ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। দেশটির কর্মকর্তাদের দাবি, কোয়াডকপ্টারটি সীমান্তের ওপার থেকে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত সেটি গুলি করে নামিয়ে আনে।

গত ২৮ এপ্রিল রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ভারত যেকোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলে তার জবাব দিতে প্রস্তুত আছে তার দেশ। তিনি বলেন,  ‘আমরা আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করেছি। কারণ, এখন এটি (সম্ভাব্য হামলা) অত্যাসন্ন হয়ে উঠেছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

তবে ভারত যদি হামলা চালায় তাহলে প্রয়োজনে পারমাণবিক অস্ত্র দিয়ে পাল্টা হামলা চালানো হবে বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।

এ অবস্থায় সীমান্তে কাশ্মীরের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে বাঙ্কার প্রস্তুত করে তাতে লুকিয়ে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঝুঁকি এড়াতে কাশ্মীরের ৮৭টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য এগুলো বন্ধ থাকছে।

ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী গান

পেহেলগাম হামলাকে কেন্দ্র করে ভারতে মুসলিমবিদ্বেষ বেড়েছে। মঙ্গলবার আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় ইউটিউবে মুসলিমবিদ্বেষী গান ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আবার দ্রুত ভাইরালও হচ্ছে। এছাড়া একই ধরনের আরও কয়েকটি গান সামাজিকমাধ্যমে রয়েছে। এগুলোর কথা হিন্দুত্ববাদী ও মুসলিম বিদ্বেষে পূর্ণ। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপিও একটি হিন্দুত্ববাদী দল।

পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র কোথায় আছে?

২০২৩ সালে ‘ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্সেস’ পাক পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে বিস্তারিত কিছু তথ্য জানিয়েছিল। সংস্থাটির প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল, কোথায় এই অস্ত্রগুলো (সম্ভাব্য) রাখা আছে। পাকিস্তান বছরে নতুন করে ১৪ থেকে ২৭টি পারমাণবিক অস্ত্র নিজেদের ভাণ্ডারে যুক্ত করার কাজ করছিল। ২০২৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। অপরদিকে একই সময়ে ভারতের কাছে ছিল ১৮০টি অস্ত্র।

সংস্থাটি জানিয়েছিল, পাকিস্তান এসব পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য তাদের মিরেজ-টু এবং মিরেজ-থ্রি যুদ্ধবিমানের ওপর নির্ভরশীল। আর এই বিমানগুলো দুটি ঘাঁটিতে থাকে। ধারণা করা হয়, এ দুটি ঘাঁটিতে কিছু অস্ত্র মজুদ করা আছে। এরমধ্যে একটি হলো মাশরুর বিমান ঘাঁটি, যা করাচির কাছে অবস্থিত।