কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে টানা ছয় রাত ধরে সংঘর্ষ চলছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতেও দুই দেশের মধ্যে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, পাকিস্তান প্রথম গুলিবর্ষণ শুরু করে। যদিও হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, জম্মু ও কাশ্মীরের পারগওয়াল সেক্টরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর পাকিস্তানের দিক থেকে ‘ভারী গুলিবর্ষণ’ হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে পাল্টা জবাব দিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক এ গোলাগুলির ঘটনা শুরু হয় পেহেলগাম এলাকায় হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হবার পর। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর অঞ্চলে এটি সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এ হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও, পাকিস্তান সরকার বা দেশটির গণমাধ্যমে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইসলামাবাদ এই ঘটনার দায় অস্বীকার করতে পারে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের টানা গুলিবিনিময় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ, যা কেবল সীমান্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকেই হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, গত ছয় দিনে জম্মু অঞ্চলের অন্তত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে পাকিস্তানের সেনারা একতরফাভাবে গুলি চালিয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘কার্যকর জবাব’ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরমে
সীমান্ত উত্তেজনার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কও নাজুক অবস্থায় পৌঁছেছে। পেহেলগাম হামলার পরপরই ভারত সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। এর জবাবে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিত করে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য নিজের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয়।
এ ছাড়া, উভয় দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরস্পরের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ফলে, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
পূর্বের উত্তেজনার পুনরাবৃত্তি?
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৬ সালে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ও ২০১৯ সালের বালাকোট বিমান হামলার মতো বড় ধরনের সংঘর্ষের স্মৃতি এখনো টাটকা। বর্তমান পরিস্থিতি সেদিকেই ইঙ্গিত করছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও।
জাতিসংঘ ও ওআইসি (ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা) এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।