জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্তে দুই দেশ একে অপরকে চাপ দিচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে আকাশপথেও।
পাকিস্তান তাদের আকাশসীমা ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। যার ফলে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকে দীর্ঘ পথ ঘুরে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে।
বেড়েছে ফ্লাইটের সময় ও খরচ
পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে না পারার কারণে ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোকে দীর্ঘ পথ ঘুরে ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে। এর ফলে ফ্লাইটের সময় ও খরচ বেড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, সান ফ্রান্সিসকো থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি আগে সরাসরি ১৫ ঘণ্টা ২৫ মিনিটে পৌঁছাত, এখন ভিয়েনাতে থামার কারণে ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
একইভাবে, দিল্লি থেকে শিকাগোগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি আগে ১৪ ঘণ্টা ৪৭ মিনিটে পৌঁছাত, এখন ১৯ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে।
রিফুয়েলিংয়ের জন্য থামতে হচ্ছে
দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় এবং আকাশে দীর্ঘ সময় অবস্থানের কারণে রিফুয়েলিং এখন বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। এ কারণে এয়ার ইন্ডিয়া এখন কোপেনহেগেন ও ভিয়েনায় থামছে জ্বালানি নেওয়ার জন্য।
এই অতিরিক্ত খরচ কেবল বিমান সংস্থার ওপরই চাপ দিচ্ছে না, বরং যাত্রীদের টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
আঞ্চলিক ফ্লাইটও প্রভাবিত
বিষয়টি শুধু বড় রুটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। আঞ্চলিক রুটেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
উদাহরণস্বরূপ, ইনডিগোর ৬ই১৮০৬ ফ্লাইটটি আগে দিল্লি থেকে তাসখন্দে যেতে ২ ঘণ্টা ১৮ মিনিট সময় লাগত, এখন সেটি ইরান ও তুর্কমেনিস্তান হয়ে ঘুরে যেতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে সময় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রভাব
সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তান কূটনৈতিকভাবেও একে অপরের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
ভারত সরকার পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বন্ধ করেছে, আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, এবং সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তিও স্থগিত করেছে। একই সঙ্গে পাকিস্তান হাইকমিশনের সামরিক উপদেষ্টাদের ‘অবাঞ্ছিত' ঘোষণা করা হয়েছে।
পাকিস্তান এর পাল্টা জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে এবং ভারতীয় এয়ারলাইনের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া তারা সার্ক ভিসা ছাড় প্রকল্প স্থগিত করেছে, যদিও শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য কিছুটা ছাড় রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উদ্বেগ
আকাশসীমা ব্যবহারে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা সাধারণত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেখা যায়। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছে, দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়লে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের প্রভাব যেমন উড়োজাহাজে বাড়তি সময় ও খরচ নিয়ে এসেছে, তেমনি এটি দুই দেশের সম্পর্কে আরও ফাটল ধরাচ্ছে। কূটনৈতিক সংকট যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে সাধারণ যাত্রী থেকে শুরু করে বৈশ্বিক বাণিজ্য পর্যন্ত এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।