জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলাকে ঘিরে সাম্প্রতিক উত্তেজনার জেরে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে।
তবে যদি এ আশঙ্কা সত্য হয়, সেক্ষেত্রে প্রথম আঘাত পাকিস্তান করবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দার।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টির শঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসাক দার দেশটির পার্লামেন্টের সিনেট অধিবেশনে ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত সিনেট অধিবেশনে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান কখনোই প্রথম আক্রমণ চালাবে না। কিন্তু যদি যুদ্ধ শুরু হয়েই যায়, তাহলে দেশ পিছু হটার পথ নেবে না।’
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বাড়ছে
ইসাক দার জানান, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ঘিরে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, কুয়েত, বাহরাইন ও হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা পাকিস্তানকে ফোন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তারা দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
পেহেলগাম হামলা নিয়ে সন্দেহ
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর চালানো হামলার পেছনে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন।
তার ভাষায়, ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পরই ৩৭০ ধারা বাতিল করে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এবারও পেহেলগাম হামলার পর ভারত সিন্ধু নদ চুক্তি স্থগিত করেছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘এটা কি কাকতালীয়, নাকি পরিকল্পিত কিছু?’
পেহেলগাম হামলার বিবরণ
গত ২২ এপ্রিল বিকেলে জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের বৈসরণ তৃণভূমিতে ভয়াবহ হামলা চালায় কাশ্মীরভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার উপশাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’।
হামলাকারীরা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি চালিয়ে ২৬ জন পুরুষ পর্যটককে হত্যা করে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এটি ২০১৯ সালের পুলওয়ামা ঘটনার পর কাশ্মীর অঞ্চলে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া
হামলার পর ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে তাৎক্ষণিকভাবে সিন্ধু নদ পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত, আকাশসীমা বন্ধ, ভিসা বাতিল এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক হ্রাসের ঘোষণা দেয়।
পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও সিমলা চুক্তি স্থগিত করে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া সার্ক ভিসা ছাড় প্রকল্প বাতিল করা হয়, যদিও শিখ তীর্থযাত্রীদের জন্য কিছুটা ছাড় রাখা হয়।
যুদ্ধের সম্ভাবনা?
এই ঘটনার পটভূমিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শীর্ষ সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপে সবুজ সংকেত দিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ ভারত ও পাকিস্তান দুটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র এবং যুদ্ধাবস্থা বিশ্বের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :