মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন এবং তাতে তিনি ইরানের পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে ইরান বলছে, তারা এখনো কোনো চিঠি পায়নি।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, “আমার ধারণা, আপনারা (ইরান) আলোচনায় বসবেন, কারণ এটা ইরানের জন্য ভালো হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চূড়ান্ত মুহূর্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি একটি শান্তি চুক্তি দেখতে চাই, তবে অন্যভাবেও সমস্যার সমাধান হতে পারে।”
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রধারী হতে দেওয়া হবে না এবং খুব দ্রুতই এ বিষয়ে কিছু একটা হবে বলে তিনি আশা করছেন।
ইরানের প্রতিক্রিয়া
তবে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানি মিশনের এক মুখপাত্র ট্রাম্পের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। শুক্রবার তিনি জানান, “আমরা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো চিঠি পাইনি।”
ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থা সংশ্লিষ্ট নুর নিউজ ট্রাম্পের চিঠিকে “নাটকের পুনরাবৃত্তি” বলে আখ্যা দিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, “যতক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি ও নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো আলোচনায় বসব না।”
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। তারা মনে করে, ইরান শিগগিরই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, যা ইসরায়েল ও উপসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
তবে ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং তারা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরান জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (JCPOA) নামে পরিচিত এক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেন এবং ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ধীরে ধীরে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়িয়েছে এবং পারমাণবিক কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করেছে।
মধ্যস্থতায় রাশিয়ার আগ্রহ
রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চায়। মস্কো জানিয়েছে, তারা এই সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।
শুক্রবার রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ তেহরানে ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালির সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পারমাণবিক চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া অনিশ্চিত
ট্রাম্পের চিঠি পাঠানোর বিষয়ে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এখনো জানা যায়নি। রয়টার্স ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্পের চিঠি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের বক্তব্য একেবারে বিপরীত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট আলোচনার আগ্রহ দেখালেও ইরান এখনো চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেনি এবং নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে তারা আলোচনায় বসতে রাজি নয় বলে জানিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা তৈরি হয় কি না।
আপনার মতামত লিখুন :