মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বলেছেন যে, গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জরুরি, এবং এটি শুধু মার্কিন স্বার্থের জন্য নয়, বরং বিশ্ব শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, "এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের শান্তির জন্য নয়, বরং বিশ্ব শান্তির জন্য। এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়।"
মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর ও বিতর্ক
শুক্রবার (২৮ মার্চ), মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে গ্রিনল্যান্ডের একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে যান, তবে এই সফর সংক্ষিপ্ত করা হয় গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের জনগণ ক্ষুব্ধ হবার কারণে।
গ্রিনল্যান্ডের পিটুফফিক স্পেস ফোর্স ঘাঁটিতে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভ্যান্স বলেন যে, আর্কটিক অঞ্চলের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং যুক্তরাষ্ট্র যদি নেতৃত্ব না নেয়, তাহলে চীন ও রাশিয়া এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করবে।
তিনি আরও বলেন, "আমাদের সমস্যা গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সাথে নয়। বরং আমাদের সমস্যা ডেনমার্কের নেতৃত্বের সাথে, যারা গ্রিনল্যান্ডের নিরাপত্তা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এটি অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।"
ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের বিরোধিতা
ডেনমার্ক, যা ন্যাটো জোটের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির ধারণা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন বলেন যে, "এই সফর অগ্রহণযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে।"
ভ্যান্সের সফরের আগে, গ্রিনল্যান্ডের চারটি প্রধান রাজনৈতিক দল একত্র হয়ে একটি জোট সরকার গঠন করে, যাতে তারা বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী-মনোনীত জেন্স-ফ্রেডরিক নিলসেন বলেন, "এটি এমন সময়, যখন আমাদের জনগণ চাপে রয়েছে। আমাদের একসাথে থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ থাকলেই আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী।"
এদিকে, গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২২ বছর বয়সি কোরা হোয় বলেন, "ভ্যান্স যদি গ্রিনল্যান্ড দেখতে চান, তাহলে স্বাগত। কিন্তু গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।"
ট্রাম্পের পরিকল্পনা ও কৌশল
এটি প্রথমবার নয় যে, ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড দখলের কথা বলেছেন। তার প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদেও তিনি গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা ডেনমার্ক সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিল।
গ্রিনল্যান্ড একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, কারণ রাশিয়া ও চীন এখানে আর্কটিকের জলপথ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে চায়।
বুধবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, "আমি জানি না গ্রিনল্যান্ডের জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে চায় কি না, তবে আমাদের এটা করতে হবে এবং তাদের বোঝাতে হবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি
ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে ইউরোপের মিত্ররা উদ্বেগজনক বলে মনে করছে। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে।
গ্রিনল্যান্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকলেও, স্পষ্টতই ট্রাম্প তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নন।
আপনার মতামত লিখুন :