- মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে উদ্ধারকাজ চলছে দ্রুতগতিতে
- মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ১,৭০০ ছাড়িয়েছে, থাইল্যান্ডে ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত
- মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত করছে
- ব্যাংককে ভেঙে পড়া ভবনে ৭৬ জন আটকে থাকার আশঙ্কা
মিয়ানমারের ম্যান্ডালে শহরের একটি হোটেলের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, যা তিন দিন আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর এক আশার আলো জ্বেলেছে। এই ভূমিকম্পে প্রায় ২,০০০ মানুষ মারা গেছে, এবং মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে উদ্ধারকারীরা এখনও সময়ের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন জীবিতদের খুঁজে বের করার জন্য।
মিয়ানমারের গ্রেট ওয়াল হোটেল ধসে পড়ার পর ৬০ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিলেন ওই নারী। চীনা, রুশ এবং স্থানীয় উদ্ধারকারী দল একসঙ্গে ৫ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান চালিয়ে তাকে বের করে আনতে সক্ষম হয়।
চীনা দূতাবাসের একটি ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী, সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে তার অবস্থা স্থিতিশীল ছিল।
ভূমিকম্পের ভয়াবহতা
শুক্রবার (২৮ মার্চ) ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এবং এর প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী থাইল্যান্ডেও।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে, উদ্ধারকর্মীরা ক্রেন ও প্রশিক্ষিত কুকুর ব্যবহার করে একটি অর্ধনির্মিত সুউচ্চ ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা ৭৬ জনকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
ব্যাংককের গভর্নর চাদচার্ট সিত্তিপুন্ত বলেছেন, "আমরা ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাব, কারণ তুরস্কের ভূমিকম্পেও এক সপ্তাহ পর পর্যন্ত জীবিত লোক উদ্ধার করা হয়েছে।"
ধ্বংসস্তূপ স্ক্যান করে দেখা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় প্রাণের উপস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, এবং সেই স্থানগুলোতে প্রশিক্ষিত কুকুর পাঠানো হচ্ছে জীবিতদের সন্ধানে।
মৃতের সংখ্যা ও ত্রাণ কার্যক্রম
# থাইল্যান্ডে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে, তবে উদ্ধার অভিযান চলতে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
# মিয়ানমারে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, মৃতের সংখ্যা ১,৭০০ ছাড়িয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেনা সরকারের তথ্য অনুসারে মৃতের সংখ্যা ২,০২৮। যদিও রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে এই সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেনি।
# জাতিসংঘ জানিয়েছে, তারা প্রায় ২৩,০০০ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য জরুরি ত্রাণ পাঠাচ্ছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি নোরিকো তাকাগি বলেন, "আমাদের দল ম্যান্ডালেতে কাজ করছে, যদিও তারা নিজেরাই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মিয়ানমার এই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।"
আন্তর্জাতিক সহায়তা ও রাজনৈতিক সংকট
ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও রাশিয়া মিয়ানমারে ত্রাণ ও উদ্ধার দল পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ২ মিলিয়ন সহায়তা ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, এবং ইউএসএইড-এর একটি জরুরি দল মিয়ানমারে পাঠানো হচ্ছে।
তবে মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এই দুর্যোগ মোকাবিলাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
২০২১ সালে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধের ফলে দেশের ৩.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দাবি, ভূমিকম্পের পরও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গ্রামগুলোর ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
সমগ্র দেশে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো- সেতু, মহাসড়ক, বিমানবন্দর, রেলপথ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে**, যা ত্রাণ কার্যক্রমকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প মিয়ানমারের জন্য এক নতুন সংকট তৈরি করেছে, যেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গৃহযুদ্ধের ফলে দেশটি আগে থেকেই চরম সংকটে ছিল। এখন প্রশ্ন একটাই- আর কত মানুষকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হবে?
সূত্র: রয়টার্স
আপনার মতামত লিখুন :