মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সেন্ট পিটার্সবার্গে চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধান।
একই দিনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে পুতিনকে আহ্বান জানান, ‘চলুন, এবার যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাই। হাজার হাজার মানুষ প্রতি সপ্তাহে মারা যাচ্ছে। এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ও নিষ্ঠুর যুদ্ধ।’
ক্রেমলিন জানায়, এটি ছিল চলতি বছরে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ এই বৈঠককে গঠনমূলক বলে উল্লেখ করেন। বৈঠকের আগে উইটকফ দিমিত্রিয়েভের সঙ্গেও সেন্ট পিটার্সবার্গের গ্র্যান্ড হোটেল ইউরোপে একটি সম্মেলনে দেখা করেন, যেখানে রাশিয়ার স্টেইনলেস স্টিল ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, এই বৈঠক থেকে বড় কোনো অগ্রগতি আশা করার সময় এখনো আসেনি। তবে এটি সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পেসকভ বলেন, ‘দেখা যাক উইটকফ কী বার্তা নিয়ে এসেছেন।’
ইউরোপের পদক্ষেপ এবং যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা
এই বৈঠকের দিনই ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে ২১ বিলিয়ন ইউরো (প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার) সামরিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ইউরোপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা জানান, তারা এখনো যুদ্ধের শেষের কোনো ইঙ্গিত দেখছেন না।
ইতোমধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নিজের জন্মস্থান ক্রিভি রিহ সফরে গিয়ে রাশিয়ার একটি মিসাইল হামলার স্থান পরিদর্শন করেন। এই হামলায় ১৯ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে নয়জন শিশু।
তিনি জানান, রুশ বাহিনীর সঙ্গে এখন শত শত চীনা নাগরিক লড়াই করছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে চীনের শত শত নাগরিক রাশিয়ার দখলদার বাহিনীতে যুক্ত হয়েছেন। এর মানে রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করতে চায়, এমনকি চীনা নাগরিকদের জীবন ব্যবহার করে হলেও।’
তিনি আরও একবার ইউক্রেনের জন্য আধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘শুধু শক্তিশালী অস্ত্রই জীবন রক্ষা করতে পারে, যখন প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া হয়।’
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও সাম্প্রতিক ঘটনা
ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার দাবি করে আসছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট থাকলে এই যুদ্ধ শুরুই হতো না এবং এখন ক্ষমতায় এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ থামাতে পারবেন। তিনি পুতিনের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি খুব রাগান্বিত এবং বিরক্ত।’
অন্যদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর এই ফেব্রুয়ারিতেই সৌদি আরবের এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা প্রথম মুখোমুখি হন। এতে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার নিয়েও আলোচনা হয়।
সপ্তাহের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একটি আলোচিত বন্দি বিনিময় কার্যক্রমও সম্পন্ন করে। যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত করে রুশ-জার্মান নাগরিক আর্থার পেত্রভকে, যিনি অবৈধভাবে রাশিয়ায় সামরিক উপকরণ সরবরাহের অভিযোগে সাইপ্রাসে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আর রাশিয়া মুক্ত করে ক্সেনিয়া কারেলিনা নামের একজন রুশ-আমেরিকান নাগরিককে, যিনি ইউক্রেনের জন্য মাত্র ৫১ ডলার অনুদান দিয়েছিলেন এবং ১২ বছরের সাজা পেয়েছিলেন।
এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, যদিও সামনে নির্বাচন, তবুও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক সক্রিয়তা বাড়ছে। পুতিনের সঙ্গে উইটকফের ঘন ঘন বৈঠক এটিও দেখায় যে, যুদ্ধ বন্ধে কিছু গোপন আলোচনা চলছে। তবে ইউরোপের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং চীনা যোদ্ধাদের উপস্থিতি যুদ্ধের আন্তর্জাতিকীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :