জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক উচ্ছেদ আদেশের ফলে ফিলিস্তিনিরা এখন গাজার এক-তৃতীয়াংশেরও কম জায়গায় সংকুচিত হয়ে বসবাস করছে। এতে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর আকার ধারণ করছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টেফেন ডুজাররিক জানান, ইসরায়েল গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে নতুন করে দুটি বড় উচ্ছেদ আদেশ জারি করেছে। এই নতুন ঘোষিত `ডিসপ্লেসমেন্ট জোনে` বহু হাসপাতাল ও গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ গুদাম পড়ে গেছে।
‘এই আদেশের ফলে গাজার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা হয় উচ্ছেদের আওতায়, নয়তো নো-গো জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা এখন গাজার মাত্র এক-তৃতীয়াংশেরও কম এলাকায় বাস করতে পারছেন এবং সেটিও টুকরো টুকরো করে বিচ্ছিন্ন।’- স্টেফেন ডুজাররিক
মানবিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে
ডুজাররিক আরও জানান, ইসরায়েল গত ৪০ দিন ধরে গাজায় কার্গো প্রবেশে পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুক্রবারও ১০টি ত্রাণ পরিবহনের মধ্যে ৬টি ব্যর্থ হয়।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সবকিছুরই ভয়াবহ সংকট চলছে- রুটির দোকান বন্ধ, ওষুধ নেই, পানি উৎপাদন একেবারে কমে গেছে।’
পশ্চিম তীরেও সহিংসতা তীব্র
দখলকৃত পশ্চিম তীরেও সহিংসতা বেড়েই চলেছে। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই ইসরায়েলি বাহিনী ৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের মধ্যে দুই শিশু ছিল, এবং ১৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সংস্থা আরও জানায়:
- ১০০টির বেশি কাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে শুধু এই অভিযোগে যে সেগুলোর ইসরায়েলি অনুমোদন ছিল না—যা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।
- এর ফলে ১২০ জনের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিশু।
আন্তর্জাতিক আদালতের অবস্থান
২০২৩ সালের জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম থেকে সব বসতি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়।
এই প্রতিবেদনটি গাজার অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা মানবিক ফাঁদ-এর একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
ইচ্ছাকৃতভাবে জনবসতিকে সংকুচিত করে রাখা, ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখা এবং স্বাস্থ্যসেবা অক্ষম করে ফেলা সবই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে।
এর পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও সহিংসতা ও দখল প্রক্রিয়া চলমান, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য দ্বিমুখী নিপীড়নের রূপ নিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :