জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, গত মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ইসরায়েলের অন্তত ৩৬টি বিমান হামলায় নিহতদের সবাই ছিলেন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু। এসব হামলা গাজার আবাসিক ভবন ও বাস্তুচ্যুতদের অস্থায়ী তাবু লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বলেন, ‘১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে গাজায় ইসরায়েলের ২২৪টি হামলার তথ্য আমরা যাচাই করেছি। এর মধ্যে অন্তত ৩৬টি হামলায় কেবল নারী ও শিশু নিহত হয়েছেন।’
গণহত্যার আশঙ্কা: ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্ব সংকটে
রাভিনা শামদাসানি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের সামগ্রিক সামরিক অভিযান এখন ফিলিস্তিনি জনগণের গাজায় একটি জাতি হিসেবে টিকে থাকার সক্ষমতাকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর কার্যকলাপ ফিলিস্তিনিদের এমন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলছে, যা তাদের জাতিগত অস্তিত্বের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
যুদ্ধবিরতি ভেঙে ১,৫০০ জন নিহত, মানবিক সংকট চরমে
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ১,৫০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এর পাশাপাশি, ইসরায়েল গাজায় সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করেছে। ফলে খাদ্য, পানি, জ্বালানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই সপ্তাহে বলেন, ‘এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় এক ফোঁটা ত্রাণ ঢুকতে পারেনি- না খাদ্য, না জ্বালানি, না ওষুধ। মানবিক সাহায্য শুকিয়ে যাওয়ায় গাজা এখন মৃত্যুর মাঠে পরিণত হয়েছে, যেখানে বেসামরিক জনগণ এক অন্তহীন মৃত্যুচক্রে আটকে পড়েছে।’
খান ইউনিসে এক পরিবারে ১০ জন নিহত
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) সকাল থেকেই গাজায় আবার নতুন করে হামলা শুরু হয়। শুধুমাত্র একদিনেই ১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একই পরিবারের ১০ জন, যাদের মধ্যে ৭ জনই শিশু।
আল জাজিরার মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকা থেকে সাংবাদিক তারেক আবু আজ্জুম জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু মানুষ চাপা পড়ে আছে।
তিনি বলেন, ‘বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা জানান, ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়া শিশুদের চিৎকার তারা শুনেছেন—তাদের কান্না ও সাহায্যের আহ্বান ছিল হৃদয়বিদারক।’
৪ লাখ মানুষ আবার বাস্তুচ্যুত, সহায়তা পুরোপুরি বন্ধ
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী নতুন করে গাজার দক্ষিণ অংশে জমি দখলের পরিকল্পনা করছে এবং ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ আদেশ জারি করছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা জানিয়েছে, ১৮ মার্চের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে গাজায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি আবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
সংস্থাটি আরও বলছে, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় এটাই সবচেয়ে দীর্ঘ সময় যেখানে কোনো ত্রাণ বা বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশ করতে পারেনি।’
তারা অবিলম্বে ত্রাণ প্রবেশে বাধা তুলে নেয়ার দাবি জানিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :