শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম

জেলেনস্কির ভিডিও প্রকাশের পর চীনকে ঘিরে নতুন প্রশ্ন

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম

জেলেনস্কির ভিডিও প্রকাশের পর চীনকে ঘিরে নতুন প্রশ্ন

ছবিঃ সংগৃহিত

এক চাঞ্চল্যকর একটি ভিডিও প্রকাশ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দাবি করেছেন, রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করার সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছে দুই চীনা নাগরিক। 

এই ভিডিও প্রকাশের পর থেকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। চীনের সরাসরি সামরিক সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলেনস্কি এবং পশ্চিমা দেশগুলোকে এ বিষয়ে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

যে দুই চীনা নাগরিককে ধরা পরেছেন

ভিডিওতে যাদের দেখানো হয়েছে, তারা হলেন ঝাং রেনবো এবং ওয়াং গুয়াংজুন। ইউক্রেন সরকার তাদের চীনা পাসপোর্টের ছবি প্রকাশ করেছে এবং জানিয়েছে, এরা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিলেন। জেলেনস্কি দাবি করেন, ইউক্রেনে বর্তমানে অন্তত ১৫০ জনের বেশি চীনা নাগরিক রাশিয়ার হয়ে লড়ছেন।

চীনের প্রতিক্রিয়া

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে জানিয়েছে, তারা বিষয়টি যাচাই করে দেখছে এবং মনে করিয়ে দিয়েছে, তারা কখনোই কোনও পক্ষের সামরিক অভিযানে চীনা নাগরিকদের অংশগ্রহণকে সমর্থন করে না। যদিও চীন সরাসরি রাশিয়ার পক্ষে সেনা পাঠানোর কথা অস্বীকার করেছে, তবে ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের প্রভাব একেবারেই অস্বীকার করার উপায় নেই।

চীন এরই মধ্যে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছে, রাশিয়ার জ্বালানি ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থনীতি সচল রাখতে সহায়তা করছে এবং ন্যাটো ও ইউক্রেনকে যুদ্ধের জন্য দায়ী করে আন্তর্জাতিক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

তাহলে চীনারা কীভাবে যুদ্ধে গেলেন?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধরত বেশিরভাগ চীনা নাগরিক সরাসরি চীনের সরকারপৃষ্ঠপোষকতায় যাননি। বরং তারা ব্যক্তি উদ্যোগে উচ্চ মজুরি, যুদ্ধের রোমাঞ্চ, চলচ্চিত্র বা জাতীয়তাবাদী ভাবনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই সেখানে যাচ্ছেন।

চীনের গানসু প্রদেশের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিওতে উচ্চ পারিশ্রমিকের প্রলোভন দেখে তিনি মস্কো চলে যান। যেখানে তিনি ভাড়াটে হিসেবে তার অগ্নিনির্বাপক চাকরির তুলনায় পাঁচগুণ বেশি উপার্জনের আশ্বাস পান।

একজন নিজেকে ‘রেড ম্যাকারন’ বলে পরিচয় দেয়া যোদ্ধা বলেন, তিনি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিতে চেয়েছিলেন, কারণ চীনা দেশপ্রেমমূলক সিনেমা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। এছাড়া রাশিয়ার পক্ষে যাওয়া সহজ ছিল, কারণ রাশিয়ায় ভিসা পাওয়া তুলনামূলকভাবে সহজ।

জাতীয়তাবাদ, প্রতিশোধ এবং পরিণতি

আরেক চীনা যোদ্ধা ঝাও রুই ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে যান এই উদ্দেশ্যে যে, ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়া কোনো জাপানি থাকলে, তাদের মোকাবিলা করবেন। কিন্তু ২০২৩ সালে এক ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় তিনি নিহত হন। মৃত্যুর আগে নিজের ভুল স্বীকার করে অন্য চীনাদের যুদ্ধ এড়িয়ে চলার আহ্বান জানান।

অনেক চীনা যোদ্ধা পরে রাশিয়ানের আচরণে হতাশ হয়ে পড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী তাদের ‘কামানের খাবার’ হিসেবে ব্যবহার করছে এবং অভিযানে পাঠিয়ে ফেলে রাখছে। একজন ভাড়াটে যোদ্ধা জানান, তিনি সরঞ্জামের অভাব নিয়ে অভিযোগ করলে তাকে এক গর্তে আটকে রাখা হয়।

ইউক্রেনের পক্ষে চীনারাও রয়েছেন

সব চীনা নাগরিকই যে রাশিয়ার পক্ষে লড়ছেন, তা নয়। কেউ কেউ ইউক্রেনের পক্ষে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যুদ্ধ করছেন। যেমন ইউনান প্রদেশের পেং চেনলিয়াং। তিনি রাশিয়াবিরোধী বার্তা দেয়ায় ৭ মাস চীনে আটক ছিলেন। এরপর তিনি ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দেন এবং যুদ্ধে প্রাণ হারান।

মৃত্যুর আগে একটি ভিডিওতে তিনি তাইওয়ানের পতাকা হাতে বলেন, তিনি ইউক্রেনের পক্ষে নিহত হওয়া তাইওয়ানি যোদ্ধা সেং শেং-কুয়াং-এর মতো স্মরণীয় হতে চান।

বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চীনা যোদ্ধারা

চীনা সামাজিক মাধ্যমে এখন বিতর্ক চলছে- ইউক্রেনে যুদ্ধরত চীনারা বীর, ভাড়াটে সেনা, না কি বিভ্রান্ত জাতীয়তাবাদী?

সরকার এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেনি। তবে বিষয়টি যে চীনের জন্য কূটনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর, তা স্পষ্ট। একদিকে চীন নিরপেক্ষতার কথা বলছে, অন্যদিকে তাদের নাগরিকরা এক ভয়াবহ যুদ্ধে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে।

চীনা নাগরিকদের ইউক্রেন যুদ্ধে অংশগ্রহণ একটি জটিল বাস্তবতা তুলে ধরেছে। এতে শুধু অর্থ, রোমাঞ্চ কিংবা জাতীয়তাবাদ নয়- রয়েছে ভিসা-নীতি, স্নায়ুযুদ্ধের নতুন পর্ব এবং রাষ্ট্রীয় প্রচারণার গভীর প্রভাব। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, চীন এই বিতর্ক থেকে নিজেকে কীভাবে আলাদা রাখবে, এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর প্রভাব কতটা পড়বে?

আরবি/এসএস

Link copied!