সুদানে টানা দুই বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। চলমান সংঘাতের কারণে দেশটিতে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা। তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন লাখ লাখ মানুষ। সশস্ত্র আঘাত, রোগব্যাধি ও ক্ষুধার কারণে হাজারো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যা যুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ইউএনএইচসিআর বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বৃহত্তম দেশটিতে শান্তির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
দারফুরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সাম্প্রতিক হামলায় ৪ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নিহতদের মধ্যে ৯ জন মানবাধিকার কর্মীও রয়েছেন। আরএসএফ জমজম শিবির দখলে নেওয়ার পর সেখান থেকে ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন বলে জানায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
ইউএনএইচসিআর পূর্ব ও শৃঙ্গ আফ্রিকা এবং গ্রেট লেকস অঞ্চলের পরিচালক মামাদৌ দিয়ান বালদে বলেছেন, মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুই পেরিয়ে তিন বছরে গড়াল সুদানের সংঘাত। ফলে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। নিহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ এবং বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
আইওএমের তথ্য অনুসারে, সুদানের উত্তর দারফুরের জমজম শিবিরটি আরএসএফ দখলের পর থেকে ৬০ থেকে ৮০ হাজার পরিবার এবং প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। চারদিনের হামলার পর গত রোববার আরএসএফ শিবিরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। দেশটির সরকার ও সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এতে শত শত মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রাথমিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুক্র-শনিবার জমজম ও আবু শৌক বাস্তুচ্যুত শিবির এবং উত্তর দারফুরের আল-ফাশির শহরের আশেপাশে লড়াইয়ে ৩০০ জনেরও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রিলিফ ইন্টারন্যাশনালের ১০ জন মানবিক কর্মীও রয়েছেন।
শুক্রবার ম্যাক্সার টেকনোলজিসের স্যাটেলাইট ছবিতে জমজমে জ্বলন্ত ভবন ও ধোঁয়া দেখা গেছে। সেখানে আরএসএফ হামলার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, জমজম শিবিরটি সেনাবাহিনী-সংযুক্ত গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। যুদ্ধের শুরুতে শিবিরটিতে প্রায় অর্ধ মিলিয়ন লোক বাস করত।
আধা-সামরিক বাহিনীর শেয়ার করা একটি ভিডিওতে আরএসএফের দ্বিতীয় কমান্ড আব্দেলরহিম দাগালোকে বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি ছোট দলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। তাদের খাবার, পানি, চিকিৎসাসেবা এবং তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনি।
রাজধানী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের পর আরএসএফ ক্যাম্পে আক্রমণ ত্বরান্বিত করতে দেশটির সেনাবাহিনী বেশ তৎপর হয়েছে।
দশকের পর দশক ধরে স্বাধীনতার পক্ষে অস্থিরতার পর ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান থেকে আলাদা হয়ে যায় সুদান। কিন্তু জাতিগতভাবে বিভক্তির কারণে ভূখণ্ডে শান্তি বজায় রাখতে লড়াই এখনো চলমান। ২০১৩ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বাধলেও ২০১৮ সালে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু তিন বছর পর আবারও গৃহযুদ্ধ বাধে দেশটিতে। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানির পর সংঘাতের অবসান ঘটাতে করা শান্তি চুক্তিটি অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী দেশটি।
আপনার মতামত লিখুন :