ন্যাশনাল হেরাল্ড কেলেঙ্কারিতে অর্থপাচারের অভিযোগে ভারতের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবার- কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো চার্জশিট দাখিল করেছে ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে ধারা ৩, ৪ এবং ৭০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে, যার সর্বোচ্চ সাজা সাত বছর পর্যন্ত হতে পারে।
চার্জশিটটি ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লির একটি বিশেষ আদালতে দাখিল করা হয়। আদালত ২৫ এপ্রিল মামলাটি গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্ধারণ করেছে।
অভিযোগের সারমর্ম
ইডির অভিযোগ অনুযায়ী, সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী যৌথভাবে ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ নামক একটি কোম্পানির ৭৬ শতাংশ মালিক। এই কোম্পানির মাধ্যমে তারা কংগ্রেস পরিচালিত ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’-এর সম্পত্তি মাত্র ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে অধিগ্রহণ করেন, যদিও ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’-এর প্রকৃত সম্পত্তির বাজার মূল্য প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা।
‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’ হলো সেই কোম্পানি, যা ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’, ‘কৌমি আওয়াজ’ (উর্দু) ও ‘নবজীবন’ (হিন্দি) পত্রিকা প্রকাশ করত। এটি ১৯৩৭ সালে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিভিন্ন শহরে সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য জমি বরাদ্দ পায়। তবে ২০০৮ সালে ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’ সংবাদপত্র প্রকাশ বন্ধ করে দেয় এবং কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর স্কিম দেয়।
২০১০ সালে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ৯০.২১ কোটি টাকা ঋণগ্রহণের পর, ইয়ং ইন্ডিয়ান নামের নতুন কোম্পানি মাত্র ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করে ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’-এর মালিকানা নিয়ে নেয়। ইডি’র দাবি, এভাবে গান্ধী পরিবার কৌশলে সম্পত্তির উপকারভোগী হয়ে ওঠে।
আরও যাদের নাম রয়েছে চার্জশিটে
চার্জশিটে সোনিয়া ও রাহুল ছাড়াও কংগ্রেসের আন্তর্জাতিক শাখার প্রধান স্যাম পিত্রোদা, সাংবাদিক সুমন দুবে, ইয়ং ইন্ডিয়ানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং কলকাতা-ভিত্তিক ডটেক্স মার্চেন্ডাইজ প্রাইভেট লিমিটেড ও এর কর্মকর্তা সুনীল ভাণ্ডারির নামও আছে।
ইডি দাবি করেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরের পর থেকে ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’-এর দিল্লি, মুম্বই, লখনউ, পাটনা, পঞ্চকুলা এবং ইন্দোরে থাকা সম্পত্তি থেকে প্রায় ১৪২ কোটি টাকার ভাড়া আদায় হয়েছে। এ ছাড়াও ৭৫১.৯ কোটি টাকার সম্পত্তি ইতোমধ্যে সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি এবং ৯০ কোটি টাকার শেয়ার রয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই চার্জশিটকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে উল্লেখ করেছে কংগ্রেস। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ডের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা আইনশৃঙ্খলার নামে রাষ্ট্রীয় অপরাধ। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের প্রধানমন্ত্রীর এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতিরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা ভয় পাই না। সত্যই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে।’
ইতিহাস ও তদন্ত
এই মামলার সূত্রপাত ২০১৪ সালে বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর একটি ব্যক্তিগত অভিযোগের ভিত্তিতে। তদন্ত শুরু হয় ২০২১ সালে। মামলার পরবর্তী শুনানি নির্ধারিত হয়েছে ২০২৫ সালের ২ আগস্ট।
এদিকে, ইডি ২০২৪ সালের ১১ এপ্রিল ন্যাশনাল হেরাল্ড হাউসসহ ৬৬১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি দখলের জন্য নোটিশ জারি করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :