ইউক্রেনের দখলকৃত শহর মারিউপোলে হাজার হাজার ইউক্রেনীয় নাগরিকের ঘরবাড়ি দখল করছে রাশিয়া- এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বিবিসি’র একটি অনুসন্ধানে। রুশ নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের প্রকাশিত নথির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কমপক্ষে ৫,৭০০টি বাড়িকে মালিকবিহীন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার বেশিরভাগই ইউক্রেনীয়দের মালিকানাধীন, যারা শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছেন কিংবা নিহত হয়েছেন।
ঘর রক্ষায় নাগরিকত্বের শর্ত, কঠিন নিরাপত্তা পরীক্ষা
বিবিসি’র অনুসন্ধানী রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাড়িগুলো রক্ষা করতে চাইলে নাগরিকদের রাশিয়া হয়ে মারিউপোলে ফিরতে হবে এবং সেখানে ফিল্ট্রেশন নামক দীর্ঘ ও কঠিন নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। একইসঙ্গে, তাদের ওপর রুশ নাগরিকত্ব গ্রহণের চাপও থাকছে, যা ছাড়া বাড়ির মালিকানা ফেরত পাওয়া কার্যত অসম্ভব।
আইনি মালিক থাকলেও `মালিকবিহীন` ঘোষণা
২০২৪ সালের জুলাই থেকে কার্যকর নতুন আইন অনুযায়ী, যেসব বাড়ির মালিক রাশিয়ায় নিবন্ধন করেননি, সেগুলোকে মালিকবিহীন ঘোষণা করে দখল করা হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেই ইউক্রেনীয়রা, যারা যুদ্ধের সময় নিরাপত্তার কারণে বাড়ি ছেড়ে গিয়েছেন।
রুশ প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, ২,২০০টি বাড়ি অবিলম্বে দখলের প্রক্রিয়ায় রয়েছে এবং আরও ৩,৫৫০টি বাড়ি ভবিষ্যতে দখলের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
রাশিয়ানকরণ প্রকল্পের অংশ ঘরবাড়ি দখল
এই বাড়ি দখলের ঘটনা শুধু আইনি নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। রাশিয়া মারিউপোলে নতুন সামরিক ঘাঁটি, যুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, রাশিয়ান প্রতীকসহ নতুন শহরের পরিচয় নির্মাণ করছে। ইউক্রেনীয় ভাষা ও সংস্কৃতি বাদ দিয়ে রাশিয়ান সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা এখানে স্পষ্ট।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দখলকৃত অঞ্চলে এই ধরনের সম্পত্তি দখলচতুর্থ জেনেভা কনভেনশন ও হেগ চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নেহাল ভূতা বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, কারণ এটি অবৈধ সংযুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত।’
মারিউপোলে রাশিয়ার দখলদারিত্ব শুধু সামরিক নয়- এটি এখন ইউক্রেনীয়দের অস্তিত্ব, স্বত্ব ও সংস্কৃতি ধ্বংসের পথে এগোচ্ছে। বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জন্য এটি এক অনন্ত যন্ত্রণার সূত্র, যেখানে নিজের ঘরও আর নিজের থাকে না।
আপনার মতামত লিখুন :