ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত আলোচনায় তেহরান জানিয়েছে যে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে প্রস্তুত, তবে এর বিনিময়ে তারা এমন দৃঢ় নিশ্চয়তা চায় যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভবিষ্যতে নতুন কোনো চুক্তি পুনরায় বাতিল না করতে পারেন।
এই আলোচনার প্রথম ধাপ ওমানে অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উভয় পক্ষ আলোচনাকে ইতিবাচক হিসেবে বর্ণনা করে। আগামী শনিবার রোমে দ্বিতীয় দফার আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের করা ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি একতরফাভাবে বাতিল করে দেন এবং ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। তার সর্বোচ্চ চাপ নীতি ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পুনরায় কার্যকর হয়েছে।
২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরান তার পরমাণু কর্মসূচিকে সীমিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যাতে একটি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর ইরান ধীরে ধীরে সেই সীমাগুলো অতিক্রম করে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন চুক্তিটি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করলেও, ইরানের মূল শর্ত- যাতে ভবিষ্যতে কোনো মার্কিন প্রশাসন আর এই চুক্তি ভঙ্গ না করে- তা পূরণে তারা ব্যর্থ হয়।
ইরান বরাবরই এই আলোচনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এসেছে, বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রতি তাদের অবিশ্বাস থেকেই। ট্রাম্প একাধিকবার ইরানকে বোমাবর্ষণের হুমকি দিয়েছেন যদি তারা তাদের সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি বন্ধ না করে, যদিও ইরান বারবার দাবি করে আসছে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নির্দেশনায় ইরানের আলোচনার নির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে-
# ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজ সরিয়ে না ফেলা,
# সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ না করা,
# এবং সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত ২০১৫ সালের চুক্তির নিচে নামিয়ে না আনা।
ইরান এ-ও জানিয়েছে যে, তারা তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় রাজি নয়, কারণ এটি কোনো পরমাণু চুক্তির আওতায় পড়ে না বলে তারা মনে করে।
সূত্রটি আরও জানায়, ওমানে পরোক্ষ আলোচনার সময় ইরান বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সব পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে চায় না। এটিই হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে একটি ন্যায্য আলোচনার সূচনা বিন্দু।
তেহরান শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) জানায়, যদি যুক্তরাষ্ট্র আন্তরিকতা দেখায় এবং অবাস্তব দাবি না তোলে, তাহলে একটি চুক্তি সম্ভব।
মার্কিন প্রধান আলোচক স্টিভ উইটকফ এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে বলেন, ‘ইরানকে অবশ্যই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ ও বিলুপ্ত করতে হবে, যদি তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি চায়।’
তবে তেহরানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-কেই তারা এই প্রক্রিয়ায় একমাত্র গ্রহণযোগ্য পর্যবেক্ষক হিসেবে মেনে নেবে এবং এর মাধ্যমে তারা তাদের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য প্রমাণ করতে প্রস্তুত।
সূত্র অনুযায়ী, ইরানের সাবেক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন যে, যদি ইরান আইএইএর সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অবিলম্বে তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং আর্থিক খাতের ওপর চাপ প্রত্যাহার করা।
এই আলোচনা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে- যেখানে দুই দেশের পারস্পরিক অবিশ্বাস, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা, ও ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটি টেকসই সমাধানের পথে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
আপনার মতামত লিখুন :