যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের নিচে জমে থাকা খনিজ সম্পদ এখন রূপ নিচ্ছে নতুন ভূরাজনৈতিক লেনদেনে। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ চুক্তির প্রাথমিক ধাপে সই করেছে ইউক্রেন।
যুদ্ধকালীন সামরিক সহায়তার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে খনিজ আহরণের সুযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করল কিয়েভ।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল স্থানীয় সময়), যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে, যা ভবিষ্যতের পূর্ণাঙ্গ খনিজ চুক্তির ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইউক্রেনের উপপ্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ইউলিয়া সভিরিডেঙ্কো বলেন, ‘এই সমঝোতা শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতাই নয়, বরং পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের পথও খুলে দেবে।’
ট্রাম্পের দাবি ও বাগবিতণ্ডা
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তার বিনিময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি তুলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের খনিজসম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ দিতে হবে।
ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, এই সম্পদের বাজারমূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে প্রকাশ্য বাগবিতণ্ডায় তা থেমে যায়।
পুরোনো শর্তে নতুন করে শুরু
বর্তমানে আবারও শান্তি আলোচনার আবহে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ নিয়েছে কিয়েভ। তবে জেলেনস্কির শর্ত একটাই- ‘খনিজ সম্পদ তুলে নেওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
ট্রাম্প অবশ্য আশাবাদী। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, ‘চূড়ান্ত চুক্তিটি আগামী সপ্তাহেই সই হতে পারে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের ওপর বিশেষ নিয়ন্ত্রণ পাবে।’
চুক্তির কেন্দ্রবিন্দু
এই চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ করে ইউক্রেনের নিকেল, লিথিয়াম, টাইটানিয়াম, ইউরেনিয়াম ও অন্যান্য দুর্লভ ধাতব খনিতে বিনিয়োগ এবং আহরণের অধিকার পাবে। এগুলোর বেশিরভাগই উচ্চপ্রযুক্তি ও সামরিক যন্ত্রাংশে ব্যবহার হয়, যা বৈশ্বিক ভূ-রাজনীতিতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের ভূমিতে রক্ত ঝরছে যুদ্ধের, আর নিচে লুকিয়ে থাকা খনিজ সম্পদে গরম হচ্ছে আন্তর্জাতিক চুক্তির ভাষা।
চূড়ান্ত চুক্তির তারিখ এখনো অনিশ্চিত
যদিও ট্রাম্প সময়সীমা উল্লেখ করে আত্মবিশ্বাস দেখিয়েছেন, ইউক্রেন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তারিখ ঘোষণা করেনি। বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দপ্তর থেকে।
যুদ্ধ শেষে পুনর্গঠনের নামে মাটির নিচে জমে থাকা সম্পদের দখল নিতে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক দর কষাকষি। কে কতটা কী পাবে- তার চেয়েও বড় প্রশ্ন এখন, ইউক্রেন তার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে কি না অর্থনৈতিক ও সামরিক বন্ধনদাতাদের ছায়ায়।
সূত্র: রয়টার্স
আপনার মতামত লিখুন :