বাঙালি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাত। সহজপাচ্য ও নিরাপদ খাবারের মধ্যে সাদা ভাতের জুড়ি নেই। যেমন তাড়াতাড়ি হজম, তেমনি পেটও ঠান্ডা থাকে। যদি জানের এই ভাতেও মিশে থাকে আর্সেনিক বিষ? অবাক হবেন নিশ্চয়ই। হ্যাঁ, এটাই এবার সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে বিজ্ঞানীদের গবেষণায়।
শুধু পানি নয়, প্রতিদিনের অনেক খাবারেই মিশছে রাসায়নিক। ফসলের ফলন বাড়াতে যথেচ্ছ পরিমাণে কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে। আর সেই বিষ সেচের পানিতে করে মাটিতেও মিশছে দিনের পর দিন। তা ছাড়া চাষের কাজে ভূগর্ভস্থ আর্সেনিক যুক্ত পানি ব্যবহারেও বিপদ বাড়ছে। ধান চাষের জমিও ভরে উঠছে আর্সেনিকে। এমনটাই দাবি, নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের।
সতর্ক করে গবেষকরা জানিয়েছেন, এশিয়ার দেশগুলোই রয়েছে সবচেয়ে বিপদে। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশে চালের মধ্যেও পাওয়া গিয়েছে আর্সেনিক।
‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেল্থ’ জার্নালে এ গবেষণার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই উদ্বেগ বেড়েছে। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবার বলে নয়, সহজপাচ্য খাবার হিসেবে দেশের মানুষ ভাত খেতেই অভ্যস্ত। তাতেও যদি আর্সেনিকের মতো বিষ মেশে, তাহলে বিপদ বাড়বে বৈ কমবে না।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞানী লুইস জিসকা জানিয়েছেন, তাদের টিম গত ১০ বছর ধরে গবেষণা করছে। ভারত, বাংলাদেশ-সহ এশিয়ার আরও নানা দেশের ধানজমিগুলোর নমুনা নিয়ে এসে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে যা দেখা গিয়েছে, তা হৃৎকম্পন বাড়িয়ে দেওয়ার মতোই। অন্তত ২৮ রকমের চাল পরীক্ষা করে তাতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞানীদের যুক্তি, একে তো জলবায়ু বদলের কারণে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়ছে, যা মাটি ও জলকে দূষিত করছে। তা ছাড়া কীটনাশকের এত বেশি ব্যবহার হচ্ছে যে, চাষের জমিতে তা বিপদের কারণ হয়ে উঠছে।
পানীয় জলে আর্সেনিক দূষণ নিয়ে সচেতনতার প্রচার চলছে। এদিকে, সেচের কাজে নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের ফলে ধানে-খড়েও যে আর্সেনিক ঢুকছে, সে খেয়ালই নেই। গবেষকরা সতর্ক করে বলছেন, আর্সেনিকের উপস্থিতি কিন্তু সিদ্ধ চালেই বেশি। প্রতিদিন খাবারে সিদ্ধ চালের ব্যবহারই বেশি হয়। দেখা গেছে, ভাতে অনেক ক্ষেত্রেই সহনীয় মাত্রার থেকে বেশি আর্সেনিক থাকছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান অনুযায়ী, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতি কেজি ওজনে দুই মাইক্রোগ্রাম আর্সেনিক থাকাটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এই মাত্রা পেরিয়ে যায়, তখন হার্ট, কিডনি, ফুসফুসের রোগ তো হবেই, পাশাপাশি ক্যানসারের ঝুঁকিও বহু গুণে বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে দেখা দেবে স্নায়ুর জটিল রোগ।
আর্সেনিকের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ‘আর্সেনিক-থ্রি’। যাকে সাধারণভাবে ‘আর্সেনাইড’ বলা হয়। চালে এ ধরনের আর্সেনিকের মাত্রাই বেশি।
গবেষকদের মত, কোনো ব্যক্তি যদি নিয়মিত এ চাল থেকে তৈরি ভাত, চিড়া, খই, মুড়ি খান, তাহলে আর্সেনিকের প্রকোপে নানা রকম চর্মরোগের ঝুঁকিও বাড়বে। তাই ভূগর্ভস্থ জল সেচের কাজে ব্যবহার করা বন্ধ না হলে এ বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় নেই বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
আপনার মতামত লিখুন :