ঢাকা শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৪
মোদির ভাষণে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ

নির্বাচনের সময় এলেই মেরুকরণের চেষ্টা করে বিজেপি!

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

নির্বাচনের সময় এলেই মেরুকরণের চেষ্টা করে বিজেপি!

ছবি: সংগৃহীত

আর কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হবে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের নির্বাচন। যার জন্য ইতোমধ্যেই ব্যস্ত সময় পার করছে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর নেতৃবৃন্দরা। তবে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এই নির্বাচনের আগে বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। যার ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। বুধবার (২ অক্টোবর) ঝাড়খণ্ডে এক জনসভায় বলেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে ওই রাজ্যে।

তিনি বলেন, ‘যারা সরকার চালাচ্ছে, তারা ঝাড়খণ্ডের পরিচয়ই বদলে দিতে চায়, তারা ঝাড়খণ্ডের শতাব্দী প্রাচীন নিজস্বতা ধ্বংস করে দিতে চায়। এদের কর্তৃত্ব যাদের হাতে সেই কংগ্রেস চায় ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী সমাজকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে। তারা জানে, চিরকাল তারাই আদিবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে, কোনো দিন তাদের সামনের সারিতে আসতে দেয়নি। তাই ক্ষমতায় থাকার জন্য তারা নতুন ভোটব্যাংক তৈরি করতে চাইছে।’

সাঁওতাল পরগনার উদাহরণ দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে ‘আদিবাসী জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে, অন্যদিকে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।’

একই সঙ্গে মোদি প্রশ্ন তোলেন, ‘জনবিন্যাসে বিপুল পরিবর্তন হচ্ছে, আদিবাসী আর হিন্দুদের সংখ্যা কমেছ।
আপনাদের কাছে জানতে চাই, ঝাড়খণ্ডে এই পরিবর্তন আপনাদের চোখে পড়ছে কি পড়ছে না? বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা বাড়ছে কি বাড়ছে না?’

জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর আরো প্রশ্ন, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এখানে জমি দখল করছে কি না? ঝাড়খণ্ডের নারীদের, আদিবাসী নারীদের তারা নিশানা করছে কি না? আপনারা এই বিপদ দেখতে পাচ্ছেন, জনবিন্যাসে এই বদল দেখতে পাচ্ছেন, কিন্তু ঝাড়খণ্ড সরকারের চোখে পড়ছে না?’

এর আগে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার মতো বিজেপি নেতারা একাধিকবার মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের জন্যই ঝাড়খণ্ডের জনবিন্যাস বদলে যাচ্ছে। আদিবাসী-মূলবাসীরা অদূর ভবিষ্যতে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে—এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বিজেপি নেতারা।

শুধু তাই নয়, বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ অভিহিত করা বা ‘খুঁজে বের করে করে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ’ করার হুমকিও দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বেশির ভাগ সময়ই বাংলাদেশ সরকার ওই সব মন্তব্যের পরও জোরালো প্রতিবাদ জানায়নি।

কিন্তু ঝাড়খণ্ডের এক জনসভায় অমিত শাহর মন্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ঢাকায় ভারতের উপরাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়ে প্রতিবাদ নোট দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে এভাবে প্রতিবাদ জানানো অতি বিরল ঘটনা বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

ক্ষমতাসীন ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা-কংগ্রেস জোট বলছে, বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ এনে আদিবাসীদের মধ্যে মেরুকরণের চেষ্টা করছে বিজেপি। তাদের কথায়, ২৪ বছর হয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৬ বছরই ক্ষমতায় ছিল বিজেপি। তখন কেন বিজেপি জনবিন্যাসের বদলের প্রসঙ্গ তোলেনি?

ঝাড়খণ্ডের আদিবাসী অধিকার রক্ষায় সরব অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক দয়ামণি বার্লা সম্প্রতি কংগ্রেস দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জনবিন্যাসে বদল ঘটছে, সেটা কি বিজেপির এখন মনে হলো? এই রাজ্যের জন্ম হয়েছে ২৪ বছর হলো, তার মধ্যে বিজেপিই তো ১৬ বছর রাজত্ব করেছে। যদি সত্যিই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা এখানে এসে থাকে, সেটা তাদের সরকার আটকাতে পারেনি কেন?’

তিনি আরো বলেন, ‘আবার সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বও তো কেন্দ্রীয় সরকারের। তাদের বিএসএফ কী করছে? এসব প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মেরুকরণ করার চেষ্টায় বারবার অনুপ্রবেশকারীদের প্রসঙ্গ তুলছে বিজেপি।’

প্রসঙ্গত, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া রাজ্যগুলোতে নির্বাচনের সময় অনুপ্রবেশের ইস্যু সামনে নিয়ে আসে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের কথা বলে আসলে তারা হিন্দু ভোট মেরুকরণের চেষ্টা করে।

আরবি/এফআই

Link copied!