রাশিয়ার অভ্যন্তরে যুক্তরাজ্যের তৈরি দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইউক্রেন। এর ফলে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার জানুয়ারি মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৮ সেন্ট বেড়ে ৭৩ দশমিক শূন্য ৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ, শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ২৮ সেন্ট বেড়ে ৬৯ দশমিক শূন্য ৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ, শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে।
তবে আগামী বছর বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। রোববার (১৭ নভেম্বর) ওপেক বহির্ভূত দেশগুলোতে তেলের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইইএ জানায়, ২০২৫ সালে দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলেরও বেশি তেল উত্তোলন হতে পারে। এর প্রধান কারণ চীনের দুর্বল অর্থনীতি। কেননা বিশ্বের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। দেশটির অর্থনীতি সেপ্টেম্বরে ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া চীনে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে কমছে জ্বালানি তেলের চাহিদা। চলতি বছর বৈশ্বিক তেলের চাহিদার ওপর ‘মূল চাপ’ ছিল চীনের চাহিদা।
এদিকে পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক ১৩ টি দেশের বাইরের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গায়ানা, আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলে তেলের উৎপাদন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশগুলো সম্মিলিতভাবে দৈনিক ১৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পথে রয়েছে, যা আইইএ-এর তেল ব্যবহার বৃদ্ধির পূর্বাভাসের (প্রতিদিন ৯ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল) চেয়ে বেশি।
অন্যদিকে ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো তাদের ২২ লাখ ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে। আগামী জানুয়ারি মাস থেকে উৎপাদন কোটা বাড়ানোর কাজ শুরু করতে পারে তারা।
তবে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলেও ২০২৫ সালে বৈশ্বিক চাহিদার তুলনায় দৈনিক ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি তেল উদ্বৃত্ত থাকবে। কোভিড, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে, এটি একটি শিথিল সরবরাহ পরিস্থিতিই স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।
আইইএ জানিয়েছে, মার্কিন নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় ও তার ‘ডু দি বিজনেস’ নীতির ফলে যুদ্ধের পরিস্থিতি পাল্টাবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রশমন ও মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা হ্রাস পেতে পারে। এর প্রভাব তেলের বাজারেও পড়বে।
টানা ছয় বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদক হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত আগস্টে দেশটির অভ্যন্তরীণ উৎপাদন দৈনিক রেকর্ড ১ কোটি ৩৪ লাখ ব্যারেলে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
তবে সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা আগামী কয়েক বছরে কমতে পারে। এ সময় ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো জ্বালানি তেল উত্তোলন হ্রাস করলেও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে উত্তোলন বাড়বে। ফলে আগামী বছর চাহিদার তুলনায় জ্বালানি তেলের সরবরাহ বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উত্তোলন হ্রাস অব্যাহত থাকলেও আগামী বছর চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ১০ লাখ ব্যারেল তেল সরবরাহ হতে পারে। এর মূল কারণ হলো চীনের নিম্নমুখী চাহিদা। এতে তেলের দাম আরও কমে যেতে পারে।
মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী বছরে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :