ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
স্থানীয় মুসলিম সংসদ-বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা

ভারতে মসজিদ ইস্যুতে সংঘর্ষে নিহত ৪, স্কুল ও ইন্টারনেট বন্ধ

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৪:২৪ পিএম

ভারতে মসজিদ ইস্যুতে সংঘর্ষে নিহত ৪, স্কুল ও ইন্টারনেট বন্ধ

ছবি: সংগৃহীত

একটি মসজিদ ঘিরে আবারও উত্তপ্ত ভারতের উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যের সাম্ভালে ‘শাহি জামা মসজিদ’ এলাকায় পুলিশ ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে চার জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। যাদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

সংঘর্ষে যে চারজন নিহত হয়েছেন তারা হলেন- নওমান, বিলাল, নাইম এবং মোহাম্মদ কাইফ। নিহতদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগ থাকলেও পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এ ঘটনার পর সেখানকার স্কুল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে । এছাড়া, উত্তর প্রদেশের সম্বলের বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এএনআই, দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে, সম্বলের সাংসদ এবং সমাজবাদী পার্টির নেতা জিয়াউর রহমান বারক এবং স্থানীয় বিধায়ক ইকবাল মেহমুদের ছেলে সোহেল ইকবালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দু’জনের বিরুদ্ধে সহিংসতা সৃষ্টি, জনসমাগম এবং অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটিতে এক সমীক্ষার নির্দেশ ঘিরে উত্তেজনার সূত্রপাত।

স্থানীয় হিন্দুদের দাবি, মন্দির ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছিল প্রাচীন মসজিদটি। স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি এ নিয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর দীর্ঘদিন ধরে এনিয়ে আইনি লড়াইও চলছে। তবে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন এবং সমীক্ষার বিরোধিতা করেছেন।

সম্প্রতি, শাহি জামা মসজিদে সমীক্ষার নির্দেশ দেয় ভারতের একটি আদালত। এরপরই নতুন করে শুরু হয় উত্তেজনা। সমীক্ষা ঠেকাতে নিরাপত্তা কর্মী ও জরিপকারী দলকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে স্থানীয়রা। পরে, গুলি পুলিশ ছোড়ে। এতে ঘটে হতাহতের ঘটনা।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা অভিযোগ করেন, এই সমীক্ষা তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে এবং এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমাদের ধর্মীয় স্থানের সম্মান রক্ষা করাই আমাদের লক্ষ্য। এটি আমাদের আত্মসম্মানের প্রশ্ন। তাছাড়া, ১৯৯১ সালের প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্টে এ ধরনের স্থাপনার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

তবে মামলার আবেদনকারী আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন জানান, সমীক্ষা দল সহিংসতা সত্ত্বেও আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই স্থানের ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফিসহ বিস্তারিত পরীক্ষা করেছে। সমীক্ষার প্রতিবেদন ২৯ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়া হবে।

এর আগেও বিষ্ণু জৈন এবং তাঁর বাবা হরিশঙ্কর জৈন কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মতো বহু উপাসনালয় সংক্রান্ত মামলায় হিন্দুদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদ রেঞ্জের ডিআইজি মুনিরাজ জি গণমাধ্যমকে বলেন, গতকাল রাতে তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছিল। তবে আহত একজন পরে মারা গেছেন। এ ঘটনার পর সহিংসতা এড়াতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে পুলিশ।

এদিকে, এ ঘটনার পর দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে একটি পিটিশন দায়ের করেছে বিচার ও স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা ডিকে ফাউন্ডেশন। এতে তারা উল্লেখ করে, পুলিশ প্রশাসন শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর অ্যাকশন প্রয়োগ করেছে। পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে চারজন মুসলিম মারা গেছে। যেটি নিন্দনীয় ও তদন্তের দাবি রাখে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!