পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী রাতভর ক্র্যাকডাউনের পর কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থকদের ইসলামাবাদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এর পর চার দিনের লকডাউন শেষে কর্তৃপক্ষ রাজধানীর সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সংযোগকারী সড়কগুলো আবার খুলে দিয়েছে।
বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি বলেছেন, শহরটি খালি করে দেওয়া হয়েছে। ইমরানের মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিল তাঁর দল। খবর আলজাজিরার।
ইমরান খানের অন্যতম সহযোগী খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর বলেছেন, ইসলামাবাদে মিছিল চলাকালে শত শত বিক্ষোভকারীকে গুলি করা হয়েছে। ক্র্যাকডাউনে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পৃথক বিবৃতিতে ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টিও বলেছে, হামলায় তাদের আট নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। সরকার অবশ্য এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে পুলিশ বলেছিল, মঙ্গলবার রাতের অভিযানে কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি এবং প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরপর বুধবার সকালে শহরের কর্মীরা ধ্বংসাবশেষ এবং সড়কে রাখা শিপিং কনটেইনার পরিষ্কার করেন। বিক্ষোভকারীদের থামাতে রাজধানীমুখী সড়ক অবরোধ করতে এসব কনটেইনার ব্যবহার করা হয়।
১৫০টিরও বেশি মামলায় ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে বন্দি ইমরানের মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি দিয়েছিল পিটিআই। তাঁর সমর্থকরা রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেছিল।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। তিনি মঙ্গলবার কঠোর নিরাপত্তাব্যূহ ভেদ করে রাজধানীর রেড জোনে ঢুকে পড়েন, যেখানে সরকারি ভবন এবং দূতাবাস রয়েছে।
১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে সামলাতে রাজধানীতে প্রায় ২০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষে আধা সামরিক বাহিনীর চার সেনাসহ বেশ কয়েকজন নিহত হন। মঙ্গলবার গভীর রাতে সেনাবাহিনী রেড জোনের ডি-চক এলাকার একটি বড় স্কয়ারের নিয়ন্ত্রণ নেয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়েছিল।
এর পর পিটিআই বিক্ষোভ কর্মসূচি ‘সাময়িক স্থগিত’ করার ঘোষণা করেছে বলে বুধবার বেসরকারি টিভি স্টেশন জিও নিউজ জানায়। পিটিআইর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ার শহরের সভাপতি মোহাম্মদ আসিম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তাদের দল ‘যথাযথ সলাপরামর্শের পরে নতুন কৌশল নির্ধারণ করবে।’
তিনি বলেন, বুশরা বিবি এবং খাইবার পাখতুনখোওয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গন্ডাপুর ইসলামাবাদ থেকে ‘নিরাপদে’ ফিরে এসেছেন। পুলিশ বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।
অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে শুক্রবার থেকে পুলিশ ইমরান খানের চার হাজারের বেশি সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে এবং দেশের কিছু অংশে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়। পরে তা সচল করা হয়।
পিটিআই দাবি করেছে, তাদের দলের বেশ কয়েকজন কর্মী ক্র্যাকডাউনের সময় নিহত হয়েছেন। তারা এ ঘটনার তদন্তের আবেদন করেছেন। রাতে বিবিসিকে হাসপাতালের দুটি সূত্র জানায়, তারা গুলিবিদ্ধ চারজন বেসামরিক লোকের মৃতদেহ পেয়েছে।
কারাগারে থেকেও সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান পাকিস্তানের রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। গত ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তাঁর দলকে নিষিদ্ধ করা হলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তাঁর দল সমর্থিত প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পান। তবে তাঁর দল সরকার গঠন করতে পারেনি।
আপনার মতামত লিখুন :