ঢাকা সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ট্রাম্প

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৮:৩২ এএম

হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ট্রাম্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চার বছর পর আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ  সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নেওয়ার পর শুরু হবে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের পথচলা।  হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

অভিষেকের দিনটি উদযাপনের জন্য সংগীত পরিবেশনা, কুচকাওয়াজ এবং বেশকিছু আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন রয়েছে। এ ছাড়া অভিষেক অনুষ্ঠানে রয়েছে ট্রাম্পের শপথ। এ সময় নিরাপত্তার বলয়ে মোড়া থাকবে ক্যাপিটল হোয়াইট হাউস। অনুষ্ঠানটি বিবিসি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। ট্রাম্পের এই শপথ অনুষ্ঠানে বড় চমক হবে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের উপস্থিতি। 

১৮৯৩ সালে প্রথম হোয়াইট হাউস ছাড়ার চার বছর পর আবার হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। দেশটির ২২ ও ২৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। ১৮৮৫ সালে প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন ক্লিভল্যান্ড। এর ১৩১ বছরের পরের ঘটনায় রেকর্ড ভেঙে আবার হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন ট্রাম্প। 

এভাবেও ফিরে আসা যায়- এমন ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের গল্পের সার্থক রূপকার মাত্র দুই প্রেসিডেন্ট। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

আজ সোমবার দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ৭৮ বছর বয়সি এই রিপাবলিকান নেতা ওয়াশিংটনের ইউএস ক্যাপিটালে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শপথ নেবেন এবং চার বছর আগে অপমানজনকভাবে ছেড়ে যাওয়া হোয়াইট হাউসে বিজয়ীর বেশে ফিরবেন। 

শপথ গ্রহণের আগে গতকাল রোববার তারকাবহুল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট ভিক্টরি র‌্যালি’ আয়োজন করেন ট্রাম্প। এতে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্ক এবং ‘ওয়াই.এম.সি.এ’ গানটির জন্য বিখ্যাত ব্যান্ড ‘ভিলেজ পিপল’ পারফর্ম করবে বলে জানা গেছে।

বিলিয়নিয়ার ট্রাম্পের এই প্রত্যাবর্তনকে একটি অসাধারণ যাত্রার সমাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি দুইবারের প্রাণনাশের চেষ্টা ও একটি ঐতিহাসিক ফৌজদারি মামলা পেছনে ফেলে প্রেসিডেন্সি পুনরুদ্ধার করেছেন। তবে ৪৭তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের এই উদযাপনে বাগড়া দিয়েছে একমাত্র আবহাওয়া। 

একটি প্রাণঘাতী ‘পোলার ভর্টেক্স’ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শীতল আবহাওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও চরম হলে শপথ অনুষ্ঠান ঘরের ভেতরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রতি চার বছর পরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেন। নবনির্বাচিত বা পুনর্নির্বাচিত যিনিই হোন, এই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান নতুন নেতার ব্যক্তিগত ছোঁয়ায় অনন্য হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠান সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরা হলো।

মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী নতুন প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শুরু হয় ২০ জানুয়ারি দুপুরে। যদি সেদিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার পড়ে, তবে পরের দিন প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি ক্যাপিটালের পশ্চিম লনে ন্যাশনাল মলের দিকে মুখ করে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে শপথ নেন প্রেসিডেন্টরা। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। 

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে শপথ অনুষ্ঠানে প্রযুক্তি জগতের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিদের উপস্থিতি হবে একটি বড় চমক। ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ এবং টিকটকের সিইও শৌ চিউসহ আরও অনেকে এই অনুষ্ঠানে ভিআইপি আসনে থাকবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বারাক ওবামা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন। তবে মিশেল ওবামা আসবেন না। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ হিলারি ক্লিনটন এবং বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও উপস্থিত থাকবেন। 

যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে প্রথাগতভাবে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো না হলেও এবার ইতালি ও হাঙ্গেরির ডানপন্থি নেত্রী জর্জিয়া মেলোনি ও ভিক্টর অরবান, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ার মিলেই এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমাগমের আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি টিকিট বিতরণ করা হয়েছে। যারা টিকিট পাননি তারা ন্যাশনাল মলে বড় স্ক্রিনে সরাসরি অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। শপথের পর ট্রাম্প ক্যাপিটাল থেকে হোয়াইট হাউসে একটি জমকালো প্যারেডের মাধ্যমে যাত্রা করবেন। আজ রাতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায় ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন ভিক্টরি র‌্যালি’ অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্বে ট্রাম্প মানেই আলোচনা-সমালোচনা। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও বিতর্কিত সব কাজকর্ম করে চলেছেন তিনি। মুসলিম নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করছেন। তিনি সব সময় আলোচনায় থাকতে ভালোবাসেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরও তাঁর এই মনোভাবে পরিবর্তন আসেনি। সময়-অসময়ে টুইটারে নানা টুইট করে সংবাদের শিরোনাম হচ্ছেন তিনি।

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অভিষেক উপলক্ষে ইতিমধ্যে রাজধানী ওয়াশিংটনে এসে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছে এএফপি। ওয়াশিংটনের অদূরে ডালাস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত শনিবার ট্রাম্প স্ত্রী মেলানিয়া ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে পৌঁছান। অভিষেকের আগে ট্রাম্প ওয়াশিংটনে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। 

এর আগে শনিবার সকালে এনবিসি নিউজকে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, শপথ গ্রহণ শেষে উদ্বোধনী ভাষণের পর তিনি রেকর্ডসংখ্যক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন। তিনি আরও জানান, কয়টি আদেশে তিনি স্বাক্ষর করবেন তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। আদেশের (অর্ডার) সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে যাবে কি নাÑ জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে ট্রাম্প জানান, ওই রকমই হবে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনের কার্যসূচিতে ‘গণবিতারণ’ কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়ে এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, যেসব অভিবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের বহিষ্কার কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু হবে। গত শনিবারের প্রাইভেট পার্টির পর ওয়াশিংটনে তার সমর্থকদের একটি র‌্যালিতে যোগ দেন। এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প আর্লিংটন জাতীয় কবরস্থানে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। গতকাল ওয়াশিংটনে একটি ডিনার পার্টিতে যোগ দেন ট্রাম্প।

দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের শপথ ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের প্রস্তুতির মধ্যেও এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে দেশটিতে। রয়টার্স জানিয়েছে, রিপাবলিকান এই নেতার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে নারী অধিকার, জলবায়ু সংকট ও জাতিগত ন্যায়বিচারের মতো সাংবিধানিক অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কায় ‘পিপলস মার্চ’ নামে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নামা হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন ট্রাম্প। 

এবার দ্বিতীয় মেয়াদেও ২০২৪ সালে নারী প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত নভেম্বরে নির্বাচন ও এর আগে নির্বাচনি প্রচারে নারী অধিকারের বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয়। যার প্রতিফলন এই বিক্ষোভে দেখা যাচ্ছে। চলমান এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অধিকাংশই নারী। 

রয়টার্স আরও জানায়, মার্কিন কংগ্রেস ভবনের আশপাশে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এই বিক্ষোভ রাজধানী ছাড়িয়ে অন্য শহরগুলোতেও ছড়িয়ে যেতে পারে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। তবে পুলিশ জানায়, সংখ্যাটি ২৫ হাজারের বেশি হবে না।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে শপথ নেওয়ার সময়ও দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছিল। ২০১৭ সালের ওই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘উইমেন মার্চ’। ওই বিক্ষোভের মতো এবারও অনেককে গোলাপি পোশাকে দেখা গেছে। তবে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে ওয়াশিংটনে পা রাখলেও রেকর্ড ভেঙে প্রত্যাবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!