আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে "মব জাস্টিস" বা জনতার হাতে বিচার কার্যক্রম বাড়ছে, যা দিনদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রথমে উগান্ডায় শুরু হওয়া এই সহিংসতা এখন দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া, ঘানা, কেনিয়া সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব দেশের নাগরিকরা একে অপরকে বিচারের নামে মব লিঞ্চিং বা জনতার সহিংসতার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করছে, যার ফলে অনেক নিরীহ ব্যক্তি প্রাণ হারাচ্ছেন।
২০১৩ সালে উগান্ডায় মব সহিংসতার ঘটনা ঘটে ৪২৬টি। তবে, ২০১৯ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৭৪৬-এ দাঁড়ায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এসব ঘটনার মূল কারণ ছিল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ জনগণের অনাস্থা।
জনগণ নিজেদের বিচার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শুরু করেছিল এবং একে অপরকে হত্যার মাধ্যমে শাস্তি দিচ্ছিল। এতে দেশটিতে সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় মব সহিংসতা সবচেয়ে মারাত্মক আকারে রূপ নিয়েছে। ২০২২ সালে দেশটিতে ২৭ হাজার হত্যাকাণ্ডের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ, অর্থাৎ ১ হাজার ৮৯৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে মব সহিংসতায়। ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসেই ১ হাজার ৪৭২টি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি করেছে।
নাইজেরিয়ায় গত এক দশকে মব সহিংসতার ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৩ থেকে ২০২3 সাল পর্যন্ত অন্তত ৫৫৫টি মব সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
এ ধরনের সহিংসতা সাধারণত বাজার, ব্যস্ত সড়ক ও জনাকীর্ণ এলাকাগুলিতে ঘটে। দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এসব সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিরা প্রায়ই এই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন, যাদের ওপর মব সহিংসতার ঘটনা ঘটছে বেশি।
মব সহিংসতার পেছনে বড় কারণ হিসেবে সরকারি অক্ষমতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে জনগণের ক্ষোভ উঠে এসেছে।
আফ্রিকার এই দেশগুলিতে যখন সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তখন জনগণ নিজেরাই আইন তুলে নিয়েছে এবং একে অপরকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সহিংস পন্থা গ্রহণ করছে। এই পরিস্থিতি শুধু আইনগত সংকট নয়, বরং দেশের সামাজিক কাঠামোর জন্যও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।