ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার কারাগারে বৃটিশ আমলের বর্ণাশ্রম প্রথার অবসান ঘটিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ১৮৯৪ সালের বৃটিশ-যুগের কারা আইন অনুসারে এই প্রথা তৈরি হয়েছিল, যা বন্দিদের মধ্যে বর্ণভেদ তৈরি করত।
এই কারা বিধির আওতায়, যোগ্য বর্ণ এর বন্দিরাই রান্না ও খাবার পরিবেশন করতে পারতেন, উচ্চবর্ণ বন্দিরা ক্ষৌরকর্মের কাজ করতেন এবং নিচুবর্ণ বন্দিরাই সাফাইকর্মের জন্য নির্ধারিত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই অসাংবিধানিক বর্ণাশ্রম প্রথা শেষ হয়ে গেছে। রাজ্য কারা দফতর এই বৈষম্যমূলক বিধিগুলি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
বাতিল হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিধি হলো রুল ৭৪১, যা বলেছিল যোগ্য বর্ণের বন্দি খাবার রান্না ও পরিবেশন করবেন, এবং তা একজন আধিকারিকের তত্ত্বাবধানে হবে। এছাড়া রুল ৭৯৩ বাতিল হয়েছে, যা বলে ছিল যে কেবল উচ্চবর্ণ বন্দিরাই ক্ষৌরকর্ম করবেন এবং নিচু জাত বন্দিরা সাফাইকর্ম করবেন।
বিভিন্ন বন্দিরা এখন কোনোরকম বর্ণ বা জাতের বৈষম্য ছাড়াই রান্না এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নিতে পারবেন।
মেদিনীপুর সংশোধনাগারের সাবেক ডিআইজি অরিন্দম সরকার জানান, এই বিধিগুলি স্বাধীনতার আগে থেকে ছিল এবং তা বৃটিশ আমলে প্রয়োগ করা হতো। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে কখনো বর্ণভিত্তিক বিভাজন তিনি দেখেননি এবং কারাগারের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজনও প্রায় নেই।
অভিনেতা নাইজেল আকারা, যিনি ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন, একই মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, কারাগারে কাজ দক্ষতা এবং আগ্রহের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। তবে, আমি শুনেছি যে পশ্চিমবঙ্গের বাইরে, বিশেষ করে গোবলয়ে, বর্ণভেদ বজায় রয়েছে।
এভাবে পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে ব্রিটিশ প্রথার অবসান ঘটানোর মাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে একটি বড় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, যা ভারতীয় কারাগারের ব্যবস্থায় সাম্য ও ন্যায়ের দিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :