ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করছে তুরস্ক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ১০:০৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করছে তুরস্ক। বার্ড ফ্লুর বিধ্বংসী প্রাদুর্ভাবের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের উত্পাদন হ্রাস পেয়েছে এবং সেখানে ডিমের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে সেখানে চাহিদার সঙ্গে যোগানের সামঞ্জস্য রাখা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি প্রকাশিত সরকারি তথ্য বলছে, গত জানুয়ারিতে মার্কিন শহরগুলোতে এক ডজন গ্রেড-এ ডিমের গড় দাম ৪ দশমিক ৯৫ ডলারে পৌঁছায়, যা দুই বছর আগের ৪ দশমিক ৮২ ডলারের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে। গত আগস্টে এই দাম ছিল মাত্র ২ দশমিক ০৪ ডলার।

মূলত বার্ড ফ্লুর কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কোনো খামারে ভাইরাস শনাক্ত হলে সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো ঝাঁকই ধ্বংস করে ফেলা হয়। অনেক খামারে লাখ লাখ মুরগি থাকায় একেকটি সংক্রমণেই ডিমের সরবরাহে বড় ধাক্কা লাগে।

একটি খামারে প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কয়েক মাস লেগে যায়। কারণ মরা মুরগি সরানো, শেড পরিষ্কার ও নতুন মুরগি ডিম উৎপাদনে সক্ষম হতে অনেকটা সময় লাগে।

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সেখানে বার্ড ফ্লুর প্রাদুর্ভাবের পর ১৬ কোটি ২০ লাখ মুরগী, টার্কি এবং অন্যান্য পাখি নিধন করা হয়।

মার্কিন খামারীদের প্রতিনিধিত্ব করা ইউনাইটেড এগ প্রডিউসারের প্রধান নির্বাহী চাড গ্রেগরি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিম সরবরাহের ওপর চাপ কমাতে সহায়তা করার জন্য অস্থায়ী আমদানিকে আমরা সমর্থন করি।

বার্ড ফ্লুর পাশাপাশি ডিমের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে। খাদ্য, জ্বালানি ও শ্রম ব্যয় বৃদ্ধির কারণে খামারিরা বাড়তি খরচের মুখে পড়েছেন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি রাজ্যে কেবল খাঁচামুক্ত ডিম বিক্রির বিধান চালু হয়েছে, যার ফলে এ ধরনের ডিমের সরবরাহ কমেছে। বিশেষ করে, ক্যালিফোর্নিয়ায় সাম্প্রতিক সংক্রমণগুলো মূলত খাঁচামুক্ত খামারেই ঘটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের চাহিদাও বেড়েছে।

ডিমের মূল্যবৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতির দুই-তৃতীয়াংশের জন্য দায়ী ডিমের দাম বৃদ্ধি।

গড় মূল্য ৪ দশমিক ৯৫ ডলার হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক জায়গায় এক ডজন ডিমের দাম ১০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে, অর্গানিক ও মুক্তভাবে পালন করা (কেজ-ফ্রি) মুরগির ডিমের দাম আরও বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকট ভবিষ্যতে এই সংকট কাটার সম্ভাবনা নেই। সাধারণত ইস্টারের আগে ডিমের চাহিদা বাড়ে, যা দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। মার্কিন কৃষি বিভাগ গত মাসে পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২৫ সালে ডিমের দাম আরও ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

ক্যালিফোর্নিয়ার এন্সিনাল মার্কেটের মালিক জো ট্রিম্বল জানান, সরবরাহ সংকটের কারণে তার দোকানে বেশিরভাগ সময়েই ডিমের তাক মাত্র ২৫ শতাংশ পূর্ণ থাকছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০ ডিম রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে একটি তুরস্ক। চলতি মাস থেকেই দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ডিমের চালান রপ্তানি শুরু হয়েছে এবং আগামী জুলাই পর্যন্ত তা চলবে। তুরস্কের ডিম উৎপাদনকারী কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আফিয়ন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানিয়েছেন, ৭০০ কন্টেইনারে করে প্রায় ১৫ হাজার টন ডিম রপ্তানি করা হবে। বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ কমিয়ে আনতে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মার্চে টেক্সাসে দুগ্ধজাত গবাদি পশু প্রথম শনাক্ত হয়। গত এপ্রিল থেকে আক্রান্ত পশু থেকে প্রায় ৭০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।