রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজের কর্মী, শিক্ষাবিদ এবং সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ১০ দিনের চীন সফরে আসার সঙ্গে সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক অগ্রগতি ঘটছে। বেইজিং কর্তৃক শুরু হওয়া এই ‘শুভেচ্ছা সফর’-এর লক্ষ্য হলো ঢাকা এবং নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় দুই দেশের মধ্যে (চীন-ঢাকা) সম্পর্ক জোরদার করা। এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে।
এদিকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিশ্বাস হাসিনাসহ অধিকাংশ আওয়ামী নেতা ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যষযন্ত্র্র করছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একজন প্রবীণ নেতা আব্দুল মঈন খান বিবিসিকে বলেছেন, এটি মূলত একটি শুভেচ্ছা সফর। যার উদ্যোগ নিয়েছে বেইজিং। এই সফর তাৎপর্যপূর্ণ কারণ চীন এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী একটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
খানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি চীনা সরকারি কর্মকর্তা এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বর্ষীয়ান সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়ার কথা। প্রতিনিধিদলের এই সফর এমন এক সময়ে সংঘটিত হচ্ছে যখন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন এবং দিল্লি তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের জন্য হাসিনার সরকার সমালোচিত হয়েছিল, এতে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন। চীন বাংলাদেশি নেতা, কর্মী এবং প্রতিনিধিদলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করছে, যার মধ্যে ইসলামিক দলগুলোর সদস্যরাও রয়েছেন। এই সপ্তাহের সফরটি জানুয়ারিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মধ্যে একটি বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিএনপির এটি দ্বিতীয়বারের মতো চীন সফর। যা বাংলাদেশে তার অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য বেইজিংয়ের প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, চীনের কূটনৈতিক প্রসার এই অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তারের আকাঙ্ক্ষারকে প্রতিফলিত করে। প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশ চীনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি করে। দুই দেশের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে প্রধানত চীনা রপ্তানি অন্তর্ভুক্ত।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, গত ছয় মাস ধরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ভারতের সীমিত যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের কথিত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রতিবাদ জানিয়েছে, যার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দিল্লি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জোর দিয়ে বলেছেন যে, তারা (বাংলাদেশ) আমাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়’ তা নির্ভর করছে বাংলাদেশের উপর।
ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছু বিশ্লেষক মনে করেন যে, বাংলাদেশ চীনের আরও কাছে চলে যেতে পারে। চীনা বিশ্লেষক ঝো বো বিবিসিকে বলেছেন, ভারতের মতো সমগ্র উপমহাদেশকে দিল্লির প্রভাব বলয়ের অধীনে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। এই মনোভাব ভারতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
এইসব ঘটনার মাঝে বাংলাদেশ আসন্ন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা সম্ভবত এই বছরের ডিসেম্বর অথবা আগামী বছরের মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতকে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের মুখোমুখি হতে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে আসছে। সূত্র : এনডিটিভি