বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে যৌথ কমিটির ৮৬তম বৈঠক পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় শুরু হয়েছে। পাঁচ দিনব্যাপী এই বৈঠকে অংশ নিতে সোমবার (৪ মার্চ) ১১ সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল কলকাতায় পৌঁছেছে। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেও গঙ্গা নিয়ে আলোচনা, তিস্তা নেই আলোচনায়
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা দেখা দিয়েছে। ভারত আগে থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তমূলক আলোচনায় যেতে আগ্রহী নয়। তবে গঙ্গা চুক্তির নবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকটি স্থগিত করা হয়নি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে ভারতের বর্তমান সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা হচ্ছে না। কারণ, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় এবং ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সে ধরনের ম্যান্ডেট রাখে না।
গঙ্গা চুক্তি নবায়নের তাগিদ কেন?
১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে। ফলে এই চুক্তি নবায়নের জন্য হাতে মাত্র দেড় বছর সময় থাকায়, উভয় দেশই আলোচনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
বাংলাদেশ গঙ্গার পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে নতুন ফর্মুলা প্রস্তাব করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাই এই বৈঠক কৌশলগতভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।
ফারাক্কা পরিদর্শন ও বৈঠকের কর্মসূচি
গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা ফারাক্কা ব্যারাজ (ভারত) ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (বাংলাদেশ) এলাকায় পানিপ্রবাহ সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পারেন।
বৈঠকের অংশ হিসেবে ৫ মার্চ যৌথ কমিটির সদস্যরা ফারাক্কা ব্যারাজ পরিদর্শন করবেন। পরে ৬ মার্চ কলকাতার একটি পাঁচতারা হোটেলে টেকনিক্যাল কমিটির মূল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল ঢাকায় ফিরে যাবে।
গঙ্গায় ইতিবাচক মনোভাব, তিস্তায় অনমনীয় ভারত
গঙ্গা চুক্তি ১৯৯৬ সাল থেকে দুই দেশের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত চুক্তি হিসেবে পরিচিত। তবে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে এখনও কোনও চুক্তি হয়নি, যা ভারত রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই স্থগিত রেখেছে।
ভারতে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, "গঙ্গা চুক্তি নবায়ন উভয় দেশের জন্যই জরুরি, তাই এটি নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে। তবে তিস্তার বিষয়ে আলোচনা না হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশ।"
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গঙ্গা চুক্তির নবায়নে ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েই আগ্রহী। যদিও রাজনৈতিক জটিলতার কারণে তিস্তা চুক্তি অনিশ্চিত থাকছে, তবে গঙ্গার জলবণ্টন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে উভয় দেশই কৌশলগত সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা।
আপনার মতামত লিখুন :