যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাসরত ১০ জন অভিবাসীকে কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এদের মধ্যে বাংলাদেশিসহ ভেনেজুয়েলা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নাগরিক রয়েছেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশটির নাগরিক অধিকার সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) মামলা করেছে।
আইনি লড়াই শুরু করেছে এসিএলইউ
এসিএলইউ ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে মামলা দায়ের করেছে। সংগঠনটির দাবি, এই স্থানান্তর মার্কিন অভিবাসন আইনের লঙ্ঘন এবং এটি মূলত ভীতি সঞ্চারের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।
এসিএলইউ জানিয়েছে, টেক্সাস, অ্যারিজোনা ও ভার্জিনিয়ায় আটক থাকা এসব অভিবাসী কোনো গ্যাং সদস্য বা বড় অপরাধী নন। তবুও তাদেরকে গুয়ান্তানামোর মতো কুখ্যাত বন্দিশিবিরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রতিক্রিয়া
তবে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন এসিএলইউ’র অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “আমরা বিচার বিভাগের সঙ্গে কাজ করছি এবং এই মামলাটি লড়াই করব।”
ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত অভিবাসন নীতি
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন। এর অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারির শুরুতে গুয়ান্তানামো বে’র বন্দিশিবিরে অভিবাসীদের পাঠানোর পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়। উল্লেখ্য, গুয়ান্তানামো বে সাধারণত সন্ত্রাসীদের আটক রাখার জন্য পরিচিত।
এর আগে, কিউবা ও হাইতির অভিবাসীদের কয়েক দশক ধরে গুয়ান্তানামোর অভিবাসী কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভিবাসীদের সেখানে পাঠানোর প্রথম নজির সৃষ্টি করল ট্রাম্প প্রশাসন, বলছে এসিএলইউ।
‘সবচেয়ে খারাপদের’ গুয়ান্তানামোতে পাঠানো হচ্ছে?
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম দাবি করেছেন, “আমরা শুধুমাত্র সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধীদের গুয়ান্তানামোতে পাঠাচ্ছি।”
কিন্তু প্রাথমিকভাবে পাঠানো ১৭৭ জন ভেনেজুয়েলানের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের রেকর্ডই নেই। অর্থাৎ, ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
অমানবিক পরিস্থিতির অভিযোগ
এসিএলইউ’র মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গুয়ান্তানামোতে বন্দিদের প্রতিদিন কমপক্ষে ২৩ ঘণ্টা জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখা হচ্ছে।
মামলায় আরও বলা হয়েছে বন্দিদের চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হচ্ছে, গুলির হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলে জানা যায়।
পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
গুয়ান্তানামোতে অভিবাসীদের পাঠানো ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে আইনি লড়াই আরও জোরদার হতে পারে। আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে, এই বিতর্কিত অভিবাসন নীতি অব্যাহত থাকবে কিনা।
আপনার মতামত লিখুন :