ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

জেলেনস্কিকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ ইউরোপের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০২:১৭ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

এমনটাই ঘটেছে, ইউরোপের প্রভাবশালী নেতারাও যা চিন্তাও করতে পারেন না। এবার সেটিই করে দেখিয়েছেন জেলেনস্কি। আর তাই হয়তো ইউরোপের মাটিতে ফিরেই উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন, তিনি বিশ্ব রাজনীতির মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার চোখে চোখ রেখে কথা বলবে, এমন সাধ্য আছে কার? তবে এবার সেটিই করে দেখিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। 

ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে বাগবিতÐায় জড়িয়ে নজিরবিহীন সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি; যা স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এবার একজোট হচ্ছে ইউরোপের নেতারা। ইউরোপের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের টানাপড়েন মূলত শুরু হয় গত ১৮ ফেব্রæয়ারি। সেই দিন সৌদি আরবের রিয়াদে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনকে ছাড়াই আলোচনায় বসে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। 

অসঙ্গত এই আচরণ একদমই মেনে নিতে পারেননি ইউরোপের নেতারা। তখন থেকেই গুঞ্জন চলছিল ইউক্রেন ইস্যুতে একজোট হচ্ছে ইউরোপের দেশগুলো। তবে ওভাল অফিসে ঘটে যাওয়া নাটকীয় ঘটনার পর অনেকেই মনে করছেন, সেই গুঞ্জনই এখন বাস্তবে রূপ নেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর গত শনিবার লন্ডনের স্ট্যানস্টেড বিমানবন্দরে অবতরণ করেন জেলেনস্কি। এরপর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছালে জেলেনস্কিকে বুকে জড়িয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। পরে দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

 এ সময় স্টারমার বলেন, ‘যত দিন প্রয়োজন আমরা ইউক্রেনের পাশে থাকব।’ বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে দেশটিকে আড়াই বিলিয়ন পাউন্ড ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয় যুক্তরাজ্য। এ সময় জেলেনস্কি যুক্তরাজ্য ও দেশটির জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা শুধু পেয়ে আমরা গর্বিত।’ শুধু যুক্তরাজ্য নয়, ইউক্রেনের পাশে একে একে দাঁড়াচ্ছে ইউরোপের অন্য প্রভাবশালী দেশগুলো। 

ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতÐার পরই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন জেলেনস্কি। এরপর এক বিবৃতিতে ম্যাখোঁ ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘এখানে আগ্রাসনকারী হলো রাশিয়া। আর হামলার শিকার হলো ইউক্রেন।’ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, ‘ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করে বলছি, তারা জার্মানি এবং ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে।’ এ ছাড়া ইউক্রেনকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও স্পেনের নেতারা।

তবে ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা কালাস। তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এটি পরিষ্কার মুক্ত বিশ্বের নতুন একজন নেতা প্রয়োজন।’ ইউরোপ ছাড়াও কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং নিউজিল্যান্ডের নেতারা জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। ওভাল অফিসের ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার নেতাদের ছাড়া বিশ্বনেতাদের প্রায় সবাই জেলেনস্কির সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। 

এমনকি ট্রাম্পের সমালোচনা করেছেন খোদ যুক্তরাষ্ট্রেরই অনেক রাজনীতিক। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তো শিগগিরই থেমে যাবে। তবে এই ইস্যুকে ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন এক মেরুকরণ দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী।

এদিকে সীমান্ত অঞ্চলে ইউক্রেনের হামলায় রাশিয়ার ৬৫২ জন নিহত রুশ তদন্ত কমিটির প্রধান সংবাদ সংস্থা তাসকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী এবং তার কাছাকাছি অঞ্চলে ইউক্রেনীয় বাহিনীল হামলায় এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ৬৫২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। কমিটির প্রধান আলেকজান্ডার বাস্ট্রিকিন বলেছেন, নিহতদের মধ্যে ২৩ জন শিশুও রয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রায় তিন হাজার জন আহত হয়েছে। তিন বছর আগে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করে। এতে উভয় পক্ষই বেসামরিক লোকদের লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে। 

এ সংঘাতে হাজার হাজার বেসামরিক লোক মারা গেছে, যাদের বেশির ভাগই ইউক্রেনীয়। মস্কো থেকে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস এ খবর জানায়। তিনি বলেন, বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে, ইউক্রেনীয় পক্ষ রাশিয়ার ৩৪টি অঞ্চলকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এগুলো সামরিক অভিযানের অঞ্চলের বাইরে অবস্থিত অঞ্চল। তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, এ হামলা করার জন্য ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী অন্য জিনিসের মধ্যে, পশ্চিমা অস্ত্র, কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, আনচার এবং আর্টিলারি সিস্টেমের পাশাপাশি মনুষ্যবিহীন বিমানও ব্যবহার করে। 

অন্যদিকে হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট  ভলোদিমির জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গত রোববার বিবিসি জানিয়েছেÍযুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস ও বোস্টনে শত শত মানুষ ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ভারমন্টের ওয়েটসফিল্ড শহরেও সমবেত হয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স তার পরিবার নিয়ে স্কি অবকাশযাপনে গিয়েছিলেন।

 মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে ভ্যান্সের পরিবার তাদের নির্ধারিত স্কি রিসোর্ট থেকে একটি অজ্ঞাত স্থানে স্থানান্তরিত হয়।