সৈন্য সংকটে ইউক্রেন, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ১০:০৩ এএম

সৈন্য সংকটে ইউক্রেন, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে কঠিন সিদ্ধান্তের মুখে

ছবিঃ সংগৃহীত

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে একের পর এক সংকটে পড়ছে ইউক্রেন। এবার নতুন সমস্যার নাম সৈন্য সংকট। যুদ্ধক্ষেত্রের ভয়াবহতা দেখে অনেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন, আত্মগোপন করছেন বা দেশ ছাড়ছেন। ফলে সেনা সংগ্রহ করতে গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী।

অন্যদিকে নতুন সৈন্য নিয়োগের প্রচেষ্টার মধ্যেই ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে একের পর এক। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে পোলটাভা অঞ্চলে এক সেনা কর্মকর্তা গুলিতে নিহত হন। এক ব্যক্তি তার কাছে বন্দুক চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান, এরপর হামলাকারী তাকে গুলি করেন এবং এক সেনাকে নিয়ে পালিয়ে যান।

 

এই ঘটনার পর থেকেই সেনা নিয়োগ কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে একের পর এক হামলা হচ্ছে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা বলছে, এগুলো রাশিয়ার অনুপ্রবেশকারীদের কাজ। তবে অনেক সামরিক কর্মকর্তা মনে করছেন, দেশীয় বিদ্রোহীরাও এর সঙ্গে জড়িত।

সেনা সংকটে যুদ্ধের গতি কমেছে, ব্যর্থতা কুরাখোভোতেঃ 


ইউক্রেনের পূর্ব ফ্রন্টে যুদ্ধ কিছুটা ধীরগতির হলেও রক্তক্ষয়ী লড়াই চলছে। কিন্তু যুবকদের বড় অংশ যুদ্ধে যেতে চাচ্ছেন না। ফলে জানুয়ারিতে কুরাখোভো শহর রক্ষায় ব্যর্থ হয় ইউক্রেনীয় বাহিনী, কারণ সেখানে রুশ বাহিনীর তুলনায় ইউক্রেনীয় সেনা অনেক কম ছিল।

৪৬তম ব্রিগেডের এক কর্মকর্তা বলেন, "আমরা সেনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে বড় ভুল করেছি। রাজনৈতিক কারণে সময়মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, যা এখন আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হচ্ছে।"

বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে, রাশিয়ার সেনা সংখ্যা দিন দিন বাড়লেও ইউক্রেন এ দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। উপস্থিত সেনার দিক থেকে চিন্তা করলে বর্তমানে ইউক্রেনের অবস্থান দুর্বল। বর্তমানে ইউক্রেনের আনুষ্ঠানিক সেনা সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০ হাজার এবং রাশিয়ার ইউক্রেন সীমান্তে সেনার সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার।

 

তবে বাস্তবে রাশিয়া সেনা নিয়োগে এর চেয়েও অনেক এগিয়ে। ২০২৪ সালে রাশিয়া ৪ লাখ ৩০ হাজার নতুন সেনা নিয়োগ দেয়। এছাড়াও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরও রুশ বাহিনী ১ লাখ ৪০ হাজার সেনা বৃদ্ধি করেছে। 
চলতি বছরও রাশিয়ার একই পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা যায়।

এক ইউক্রেনীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই যুদ্ধে রাশিয়ার অন্তত ১০ লাখ সেনা অংশ নিচ্ছেন।


সৈন্য ঘাটতি পূরণে ইউক্রেন সরকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে, সেনা নিয়োগের বয়সসীমা কমিয়ে ১৮ বছর করা হতে পারে। তবে এটি খুবই অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত হবে, কারণ সাধারণ মানুষ এতে অসন্তুষ্ট হতে পারে। এছারা নতুন সেনাদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে:

  • ১৮-২৪ বছর বয়সীদের জন্য আকর্ষণীয় বোনাস ও ভালো বেতন
  • এক বছর পর চাকরি ছাড়ার সুযোগ
  • প্রতি মাসে কমপক্ষে ৪ হাজার নতুন সেনা যোগ করার লক্ষ্য

সেনা বাড়ালেই সমাধান নয়, বলছেন সামরিক বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অনেক সামরিক কর্মকর্তাই মনে করেন, শুধু সেনা সংখ্যা বাড়ালেই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়, কৌশল বদলাতে হবে। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রি জাগোরোদনিউক বলেন, "আমাদের কৌশল বদলাতে হবে। কম সংখ্যক সেনা দিয়েও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।"

 

যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইউক্রেনকে আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। এতে দেশের ভেতরে অস্থিরতা বাড়তে পারে এবং সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর হামলার আশঙ্কাও রয়েছে। এক ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, "যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে, কারণ এখনো পর্যন্ত এর চেয়ে ভালো কোনো সমাধান নেই।"

আরবি/এসএস

Link copied!