ইউক্রেনে অ্যাঙ্গলো-ফ্রেঞ্চ সেনা মোতায়েনের বিষয়ে মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। ব্রিটিশ এমপিরা তার বক্তব্যকে ‘অকৃতজ্ঞ’ ও ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ তাকে ‘ক্লাউন’ বলেও মন্তব্য করেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেডি ভ্যান্স বলেন, “যেসব দেশ গত ৩০ বা ৪০ বছর কোনো যুদ্ধ করেনি, তারা ইউক্রেনে ২০ হাজার সেনা পাঠাতে চায়। এটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সঠিক উপায় নয়।”
তার এই মন্তব্যের পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক সশস্ত্র বাহিনীবিষয়ক মন্ত্রী জনি মারচার তাকে সরাসরি ‘একজন ক্লাউন’ বলে অভিহিত করেন। তবে বর্তমানে তিনি সংসদ সদস্য নন।
কনজারভেটিভ এমপি বেন জেকটি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের সেই সেনাদের অসম্মান করেছেন, যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”
লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যুক্তরাজ্যের ওয়াশিংটন দূতাবাসকে পরামর্শ দিয়েছেন যে, রাষ্ট্রদূত পিটার ম্যান্ডেলসন যেন জেডি ভ্যান্সকে ক্ষমা চাইতে বলেন।
যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া ও অতীত সহযোগিতার প্রসঙ্গ
ব্রিটিশ রাজনীতিকরা ভ্যান্সের বক্তব্যকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও তার মিত্রদের প্রতি অসম্মানজনক হিসেবে দেখছেন। ছায়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস কার্টরিজ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স অসংখ্যবার ঝুঁকি নিয়েছে। আফগানিস্তানে হাজার হাজার ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল, যেখানে আমার নিজের ভাইও ছিলেন। ভ্যান্সের মন্তব্য আমাদের আত্মত্যাগকে অস্বীকার করছে, যা অত্যন্ত অসম্মানজনক।”
উল্লেখ্য, ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছিল ব্রিটিশ সেনারা। তাই অনেক ব্রিটিশ এমপি মনে করছেন, ভ্যান্সের বক্তব্য তাদের সেই ভূমিকার প্রতি অবজ্ঞাসূচক।
ভ্যান্সের অবস্থান পরিবর্তন ও নতুন মন্তব্য
তীব্র সমালোচনার পর মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ভ্যান্স তার অবস্থান কিছুটা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “আমি কখনোই বিশেষভাবে যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্সের নাম উল্লেখ করিনি। বরং গত দুই দশক ধরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছে।”
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের অফিস থেকে এ নিয়ে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সম্পর্কের প্রভাব
বিশ্লেষকদের মতে, ভ্যান্সের এই মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব যখন একসঙ্গে কাজ করছে, তখন এমন মন্তব্য দুই দেশের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করতে পারে।
এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং ইউক্রেনে শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখন দেখার বিষয়, এই বিতর্ক কীভাবে সমাধান হয় এবং দুই দেশের ভবিষ্যৎ কূটনৈতিক অবস্থান কী হয়।