ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

৯২ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হলেন সালিমা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০২:১১ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

বয়সের ভারে শরীর কিছুটা নুয়ে পড়েছে। চোখে ভালোভাবে দেখতে পারেন না, কানেও শোনেন কম। তবে জীবনের একটা পুরোনো স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি ফিরে এসেছেন পড়াশোনার টেবিলে। ছোট শিশুদের সঙ্গে মিলিয়ে তিনি উচ্চস্বরে শিখছেন অক্ষরপরিচয়।

বয়সকে তুচ্ছ করে ক্লাসের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন এই বৃদ্ধা। নতুন বন্ধু পেয়ে শিশুদের উৎসাহে কোনো কমতি নেই। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা নিজেরাই তাকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে।

জীবনের শেষবেলায় পৌঁছেও সালিমা খান হাল ছাড়েননি। সাধারণত এই বয়সে মানুষ নাতি-নাতনির সঙ্গে সময় কাটায়, কিন্তু ৯২ বছর বয়সী এই মহিলা প্রতিদিন স্কুলে যাচ্ছেন। একা হেঁটে যাওয়ার শক্তি নেই তার; তাকে সাহায্য নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু তার মনোবল কমছে না। পড়াশোনার এবং জানার তীব্র আগ্রহই তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

সালিমা ২০২৩ সালে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। উত্তরপ্রদেশের বুলান্দশহরের এই বাসিন্দা তখন থেকেই নিয়মিত স্কুলে যাচ্ছেন। স্কুলে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়ে সালিমার আনন্দ সীমাহীন। তার ভাষায়, “আমি পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম। অনেকবার আমার পরিবারের কাছে বলেছি। তারপর আমার ভাই আমাকে স্কুলে ভর্তি হতে বলেছিলেন, যাতে আমি সেখানে গিয়ে শিখতে পারি। তার পরেই আমি স্কুলে ভর্তি হলাম।”

স্কুলে এসে নানি-দাদির বয়সী সহপাঠী পেয়ে খুশি কোমলমতি শিশুরা। তারাও সালিমাকে শেখাচ্ছে, আর সালিমা তাদেরও শেখাচ্ছেন। সালিমা বলছিলেন, “যখন আমি স্কুলে বসে থাকি, তখন এই বাচ্চারা আমাকে শেখায়। আবার আমিও তাদের শেখাই। আমি শিশুদের ভালোবাসি এবং আমি এই স্কুলটাকেও ভালোবাসি।”

এই বৃদ্ধা মহিলার শিক্ষায় সাহস ও শক্তি যোগাচ্ছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ড. প্রতিভা শর্মা। তিনি বলেন, “সালিমার চোখে সমস্যা রয়েছে, তার চোখে ছানি পড়েছে এবং তিনি সঠিকভাবে শুনতে পারেন না। তাকে শেখানোর জন্য আমাদের জোরে কথা বলতে হয়। কিন্তু সালিমার আগ্রহ কখনও কমেনি। তিনি প্রতিদিন পড়াশোনা করতে মুখিয়ে থাকেন। যখন তিনি অন্য শিশুদের সঙ্গে শেখেন, কবিতা পড়েন, তখন তিনি এক ধরনের শিশুর মতো হয়ে ওঠেন। তিনি তাদের সঙ্গে হাসেন এবং পড়াশোনার আনন্দ উপভোগ করেন।”

নব ভারত লিটারেসি মিশন কর্মসূচির আওতায় স্কুলে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন সালিমা। এই সরকারি শিক্ষা প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার প্রেরণায় গ্রামের অন্য নারীরাও স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং এর মধ্যে রয়েছে সালিমার দুই পুত্রবধূও।

সূত্র: ভিয়োরি