ঢাকা রবিবার, ০৯ মার্চ, ২০২৫

তীব্র সংকটে গাজার লাখো মানুষ

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ০৮:৪৭ এএম
ছবিঃ সংগৃহীত

টানা ছয় দিন ধরে কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারেনি গাজায়। ফলে ভয়াবহ খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত এই উপত্যকায়। সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ক্ষুধার্ত শিশু ও বেসামরিক লোকজন ত্রাণ বিতরণের স্থানগুলোতে ভিড় করছে, কিন্তু খাদ্য ও পানি তীব্র সংকটের মুখে পড়েছে।  

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র গাজার জন্য বরাদ্দকৃত শত শত মিলিয়ন ডলারের সহায়তা তহবিল স্থগিত করেছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। মার্কিন কংগ্রেসের একাধিক সদস্য দাবি করেছেন, গাজার সহায়তা সরাসরি হামাসের হাতে পৌঁছানোর আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই পদক্ষেপ লাখো নিরপরাধ ফিলিস্তিনির দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে তুলবে।  

যুদ্ধবিরতি অনিশ্চিত, হামাসের প্রতিরোধ প্রস্তুত

যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। হামাসের সামরিক শাখার মুখপাত্র জানিয়েছেন, তাদের প্রতিরোধ বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে এবং ইসরায়েল যদি হামলা চালিয়ে যায়, তাহলে তারা পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তবে, যুদ্ধ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিয়ে মিসর ও আরব নেতাদের প্রস্তাবকে ‘অপর্যাপ্ত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন।  

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮,৪৪০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,১১,৮৪৫ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি গণমাধ্যম বলছে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৬২,০০০।  

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা (ওএইচসিএইচআর) জানিয়েছে, গাজায় স্বাস্থ্যব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালে ওষুধ ও সরঞ্জামের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে, এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও হাজারো মানুষের আটকে থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।  

যুক্তরাষ্ট্র-হামাস গোপন বৈঠকে ইসরায়েলের ক্ষোভ

সম্প্রতি কাতারের রাজধানী দোহায় একটি গোপন বৈঠক করেছেন ট্রাম্পের দূত অ্যাডাম বোহলার ও হামাসের শীর্ষ নেতা **খালিল আল-হাইয়া**। আলোচনায় মূলত এক মার্কিন বন্দির মুক্তি এবং চার মার্কিন নাগরিকের মরদেহ ফেরত আনার বিষয়টি ছিল। তবে ইসরায়েলকে এই বৈঠক সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি, যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে দেশটি।  

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই বৈঠককে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার জন্য ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তলব করেছেন।  

জাতিসংঘ: যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে ইসরায়েল

জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, পশ্চিম তীরের নুর শামস শরণার্থী শিবিরে ১৬টি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এটি এই অঞ্চলে স্থায়ী পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় এবং ফিলিস্তিনি জনগণের মানবাধিকার আরও সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।  

এদিকে, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চলমান পরিস্থিতির কারণে গাজা ও পশ্চিম তীরে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে আরও জটিলতা সৃষ্টি করবে।