গাজার মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করায় ইসরায়েলকে চার দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত না হলে ইসরায়েলের জাহাজ ও মিত্র বাণিজ্যিক নৌযানগুলোকে আবারও হামলার মুখে পড়তে হবে।
হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা আবদুল মালিক আল-হুথি গত শুক্রবার (৭ মার্চ) এক ঘোষণায় এই সময়সীমা বেঁধে দেন। তিনি বলেন, "আমরা মধ্যস্থতাকারীদের সম্মান জানিয়ে ইসরায়েলকে চার দিন সময় দিচ্ছি। এর পরও যদি তারা গাজায় ত্রাণ প্রবেশে বাধা দেয়, তাহলে আমাদের প্রতিরোধ আবার শুরু হবে।"
হুথিদের ঘোষণায় হামাসের প্রশংসা
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হুথিদের এই হুঁশিয়ারিকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, "ইয়েমেনের জনগণ এবং হুথি ভাইদের এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের প্রতি তাদের অটুট সংহতির প্রকাশ।"
হামাস আরও বলেছে, "গাজায় ১৫ মাস ধরে চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার বিরুদ্ধে হুথিদের লড়াই তাদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধেরই সম্প্রসারিত রূপ।"
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ও লোহিত সাগরে উত্তেজনা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভেতরে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর পর থেকেই ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করে, যা এখন পর্যন্ত ৪৮,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে এবং এক লাখেরও বেশি মানুষকে আহত করেছে।
এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা লোহিত ও ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েল ও তার মিত্র দেশগুলোর জাহাজে একের পর এক হামলা চালাতে থাকে। ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি ঘোষণা দেয়, তারা হামাস ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব হামলা চালাচ্ছে।
হুথিদের হামলার ফলে, বহু আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানি তাদের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। লোহিত সাগর ও সুয়েজ খালের বাণিজ্য রুট বিপর্যস্ত হয় ও কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজ ডুবে যায় এবং অন্তত ৪ জন নাবিক নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে তিন পর্বের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। প্রথম ধাপে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ছিল।
হামাস তখন প্রস্তাব দিয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে, তাহলে তারা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে। কিন্তু ইসরায়েল এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করে ২ মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, যার ফলে মানবিক বিপর্যয় আরও তীব্র হয়।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, হামাস যদি জিম্মিদের মুক্তি অব্যাহত রাখে, তাহলে তারা ত্রাণ সরবরাহের ওপর দেওয়া বাধা তুলে নেবে।
এখন দেখার বিষয়, চার দিনের আল্টিমেটামের পর হুথিরা তাদের হুমকি বাস্তবায়ন করে কি না এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরও কতটা বাড়িয়ে তুলবে।
সূত্র: আল-জাজিরা, বিবিসি