যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ (ICE) সংস্থা। স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অব কলাম্বিয়া ইউনিয়নের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীর নাম মাহমুদ খলিল, যিনি শিক্ষার্থীকে স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের (SIPA) শিক্ষার্থী।
গত শনিবার (৮ মার্চ), হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়নি, তবে মনে করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনপন্থী ছাত্র আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততার কারণেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
স্টুডেন্ট ওয়ার্কার্স অব কলাম্বিয়া ইউনিয়নের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। এটি সরকারের ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করার নতুন কৌশল।
গ্রেপ্তারের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় দফার কার্যক্রম শুরু করেছেন এবং অভিবাসন ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কঠোর নীতি বাস্তবায়ন করছেন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, যে সমস্ত বিদেশি শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনে যুক্ত, তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে। তিনি এই আন্দোলনকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে আখ্যা দেন এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে, মাহমুদ খলিল বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলন যুদ্ধবিরোধী এবং মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন। এতে শুধু ফিলিস্তিনি বা মুসলিম শিক্ষার্থীই নয়, ইহুদি ছাত্র ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষও যুক্ত।
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কারণ তিনি গণমাধ্যমের সামনে খোলাখুলি কথা বলেছেন।
অনলাইনে পাওয়া তথ্য অনুসারে, মাহমুদ খলিল সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে বেড়ে ওঠেন এবং বৈরুতে ব্রিটিশ দূতাবাসে কাজ করেছেন। তার স্ত্রী মার্কিন নাগরিক এবং বর্তমানে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের পর তার পরিবার চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। তবে তার আইনজীবী অ্যামি গ্রিয়ার কিংবা স্ত্রী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তারা কোনো নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন না। তবে এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এদিকে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তারা বা হোয়াইট হাউসের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছে। অনেকে এটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকারীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের ইঙ্গিত হিসেবে মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারকে দেখা হচ্ছে। আগামী দিনে এ ধরনের আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :