ইলন মাস্ক সোমবার (১০ মার্চ) জানিয়েছেন, তার মালিকানাধীন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার) বড় ধরনের সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে যে, এই হামলা কি মাস্ককে ব্যক্তিগতভাবে লক্ষ্য করে করা হয়েছে, নাকি টুইটার থেকে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করার প্রভাব এটি?
সোমবার দিন শুরুর পর থেকেই এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার অনেক ব্যবহারকারী এক্স-এর অ্যাক্সেস করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেন। ডাউনডিটেক্টর (Downdetector) নামের একটি ওয়েবসাইট জানায়, প্ল্যাটফর্মটিতে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছিল।
মাস্ক পরে এক্স-এ একটি পোস্ট দিয়ে জানান, এক্স-এর বিরুদ্ধে বিশাল সাইবার হামলা চলছে।
এর আগেও মাস্ক দাবি করেছিলেন যে, ২০২৩ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকার লাইভ স্ট্রিম করার ঠিক আগে এক্স সাইবার হামলার শিকার হয়েছিল। তবে তখনও তিনি এর কোনো প্রমাণ দেননি।
এটি কি পরিকল্পিত আক্রমণ?
মাস্কের মতে, এমন ধরনের আক্রমণ চালাতে হলে প্রচুর সম্পদ ও শক্তিশালী সংগঠনের প্রয়োজন। তিনি ইঙ্গিত দেন যে, এটি হয় কোনো দেশ বা বড় কোনো সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কাজ।
ফক্স বিজনেসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আক্রমণে ব্যবহৃত কম্পিউটারের ডিজিটাল ঠিকানা ইউক্রেন সংলগ্ন এলাকার বলে মনে হচ্ছে**। তবে এখনও তারা আসল উৎস নিশ্চিত করতে পারেননি।’
বিশ্ব রাজনীতির প্রভাব আছে কি এ ঘটনায়?
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্স-এর ভেতরের ডেটা বিশ্লেষণ ছাড়া হামলার প্রকৃতি বোঝা কঠিন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে সমস্যা চলতে থাকায় এটি সত্যিকারের সাইবার হামলা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সাইবার প্রতিরক্ষা সংস্থা ডিপওয়াচ (Deepwatch)-এর চ্যাড ক্রাগল বলেন, ‘এটি পুরো মাত্রার সাইবার যুদ্ধের মতো মনে হচ্ছে। মাস্ক এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, এবং বর্তমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে এই হামলাগুলো একটি রাষ্ট্রীয় আক্রমণের মতোই মনে হচ্ছে।’
মাস্ক বনাম ট্রাম্প প্রশাসন: সরকারে তাঁর ভূমিকা কি?
এদিকে, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (DOGE) নামে সরকারি ব্যয় কমানোর কার্যক্রম সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও মাস্কের নেওয়া কঠোর পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা ছুরি দিয়ে কাটতে চাই, কুঠার দিয়ে নয়।’ অর্থাৎ সরকারি খরচ কমানোর পদক্ষেপগুলো আরও সতর্কতার সঙ্গে নেওয়া উচিত।
এক্স কেন এত ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে?
- মাস্ক ২০২২ সালে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনে নেয়ার পর বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করেন।
- এর ফলে অনেক বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, এক্স এখন আগের মতো নিরাপদ এবং কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে না।
- মাস্কের অধীনে প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন কারিগরি সমস্যার শিকার হয়েছে এবং বিতর্কিত ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট পুনর্বহাল করেছে।
- কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, এক্স এখন অনেক বেশি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে এবং এটি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকিতে আছে।
এই ঘটনার প্রভাব কী হতে পারে?
- এক্স-এর বিরুদ্ধে সাইবার হামলা আরও বাড়তে পারে।
- মাস্কের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক চাপ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
- ব্যবহারকারীদের আস্থা নষ্ট হতে পারে, যা এক্স-এর বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই সাইবার হামলার কারণ এবং কারা এর পেছনে রয়েছে তা নিশ্চিত হতে কিছু সময় লাগবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, মাস্ক, এক্স এবং বিশ্ব রাজনীতির মধ্যে জটিল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
সূত্র: এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :