ইরান সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখানোতে তারা কোনো আলোচনায় বসবে না, বিশেষ করে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে।
এই ঘোষণা এমন এক সময় এলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন বলে জানা যায়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আর ইরাককে কোনো ছাড় দেবে না। ফলে দেশটি ইরান থেকে বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ হারাবে। এতে ইরানের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও চাপে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার (১০ মার্চ), ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘আমরা চাপে পড়ে বা ভয়ভীতির মুখে কোনো আলোচনায় যাব না। কোনো বিষয়েই না!’
আরাকচির এই বক্তব্যের একদিন আগে জাতিসংঘে ইরানের মিশন তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়েছিল। তারা বলেছিলেন, ‘যদি আলোচনার উদ্দেশ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সামরিকীকরণের আশঙ্কা দূর করা হয়, তাহলে সেই বিষয়ে আলোচনা বিবেচনার জন্য উন্মুক্ত থাকতে পারে।’
তবে আরাকচি পরদিনই জানিয়ে দেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং সামরিকীকরণের কোনো সম্ভাবনাই নেই। ফলে এ নিয়ে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না।

ট্রাম্পের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল
ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০১৫ সালের ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছিলেন। তার যুক্তি ছিল, ওই চুক্তির শর্ত যথেষ্ট কঠোর নয় এবং এটি ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বাধা দেবে না।
এবার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প আবারও ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি চালু করেছেন, যার মূল লক্ষ্য ইরানের তেল রপ্তানি শূন্যে নামিয়ে আনা। যদিও বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো পুরোপুরি ইরানের তেল বিক্রি বন্ধ করতে পারবে না, তবে এতে ইরানের অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে।
রোববার (৯ মার্চ), মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা দেয় যে, তারা ইরাকের জন্য ইরান থেকে বিদ্যুৎ কেনার ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ছাড়পত্র নবায়ন করবে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তারা বলেছে, আমরা ইরানকে কোনোভাবেই অর্থনৈতিক বা আর্থিক সুবিধা দিতে চাই না।
উল্লেখ্য, ইরান ইরাকের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। ফলে এই সিদ্ধান্তে তেহরানের বড় অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হবে।
একই দিনে, হোয়াইট হাউস ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছিল, তারা হয় একটি চুক্তিতে আসবে, নয়তো সামরিক শক্তি দিয়ে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা হবে।
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, ‘আমরা আশা করি, ইরানি শাসকগোষ্ঠী সন্ত্রাসের পরিবর্তে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।’
ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানকে দুটি উপায়ে সামলানো সম্ভব: সামরিকভাবে, অথবা চুক্তির মাধ্যমে।’
গত শনিবার, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, তাদের আলোচনার প্রস্তাব কোনো সমস্যার সমাধান করতে নয়, বরং তেহরানের ওপর নিজেদের শর্ত চাপিয়ে দিতে।
বর্তমান পরিস্থিতি ইরান-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইসরায়েল
আপনার মতামত লিখুন :