বাসমতি চালের উৎপত্তি ও স্বীকৃতি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে দুই দেশের মাঝে, যা তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বাসমতি চালের স্বীকৃতি নিয়ে দ্বন্দ্বের বিষয়টি উঠে এসেছে।
ভারত-পাকিস্তানের সীমান্ত নির্ধারণের বহু আগেই লাহোরের কৃষকরা এক ধরনের সুগন্ধি লম্বা দানার চাল উৎপাদন করতেন, যা আজ বিশ্বব্যাপী ‘বাসমতি চাল’ নামে পরিচিত। ইতিহাসবিদদের মতে, একসময় এই চাল রোমান সাম্রাজ্যেও রপ্তানি করা হয়েছিল।
ভারত দীর্ঘদিন ধরে বাসমতি চালকে একান্তই নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০২০ সালে ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাসমতি চালের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতির আবেদন করে, যা পাকিস্তানের তীব্র আপত্তির মুখে পড়ে।
অপরদিকে ইসলামাবাদ যুক্তি দেয় যে, বাসমতি শুধুমাত্র ভারতের নয়, বরং ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের যৌথ ঐতিহ্যের অংশ।
১৯৩০-এর দশকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথমবারের মতো বাসমতি জাতের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বাসমতির উৎপাদনকারী প্রধান অঞ্চলগুলোর একটি অংশ পাকিস্তানে চলে যায়।
আন্তর্জাতিক বাজারে পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের বাসমতি রপ্তানি অনেক বেশি। পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে অনেক পরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে, যার ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত কয়েক দশকে বাসমতি চালের আসল স্বাদ ও গন্ধ পরিবর্তিত হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের কৃষকেরা অধিক ফলনশীল ও দ্রুত পরিপক্ব জাতের দিকে ঝুঁকেছেন, যা মূল বাসমতির স্বাদকে প্রভাবিত করেছে।
বর্তমানে ইইউতে ভারতের জিআই স্বীকৃতির আবেদন স্থগিত রয়েছে। পাকিস্তান এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেছে, বাসমতি দুই দেশের যৌথ সম্পদ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ইতোমধ্যে ভারতের আবেদন খারিজ করেছে, যা পাকিস্তানের জন্য ইতিবাচক দিক বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ভারতীয় মেধাস্বত্ব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গুণগত মানের দিক থেকে যে দেশ এগিয়ে থাকবে, আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রাধান্য থাকবে।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাসমতির স্বীকৃতি নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব শুধু অর্থনৈতিক স্বার্থ নয়, বরং ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক বিষয়কেও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে। এ নিয়ে দুই দেশ যদি সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে উভয়ের অবস্থানই হুমকির মুখে পড়তে পারে।
প্রসঙ্গত, বাসমতি শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইন্দো-আর্য ভাষা থেকে, যার অর্থ ‘সুগন্ধি’ বা ‘সৌরভময়’। ভারত ও পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের কৃষকদের জন্য এটি শুধুমাত্র একটি ফসল নয়, বরং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।