দেড়শ’ কোটি ডলারের ক্রিপটো চুরি, ৩০ কোটি তুলে নিল উ. কোরিয়ার হ্যাকাররা

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ০৫:২৬ পিএম

দেড়শ’ কোটি ডলারের ক্রিপটো চুরি, ৩০ কোটি তুলে নিল উ. কোরিয়ার হ্যাকাররা

ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম তথা ১৫০ কোটি ডলার মূল্যের  ক্রিপটো হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে।

তাও আবার সেটি ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়ার সরকারি সহযোগিতায় পরিচালিত একটি হ্যাকার দল।

শুধু ওই টাকা চুরিই করেনি। তারা ৩০ কোটি ডলারও উঠিয়ে নিয়েছে।

জানা গেছে, ওই হ্যাকারেরা ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ ‘বাইবিট’ থেকে ১.৫ বিলিয়ন (১৫০ কোটি) ডলার মূল্যের ডিজিটাল টোকেন চুরি করে।

 

দুই সপ্তাহ আগে যে দলটি ‘বাইবিট’ এক্সচেঞ্জ হ্যাক করেছিল, সেটিকে অতীতের আলোচিত ‘লাজারাস গ্রুপ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

হ্যাকিং ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাদের একধরনের লুকোচুরি খেলা চলছে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা করছেন, যেন চুরি করা ক্রিপটোকে হ্যাকাররা নগদ অর্থে রূপান্তর করতে না পারে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ধর্ষ ওই হ্যাকার দল প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সক্রিয় থাকে এবং অনুমান করা হচ্ছে, তাদের চুরির অর্থ উত্তর কোরিয়ার সামরিক উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে।

 

ইলিপটিক ক্রিপটো ইনভেস্টিগেশন সংস্থার সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. টম রবিনসন বলেন, ‘প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, হ্যাকাররা অর্থের গতিপথ ধোঁয়াশায় পরিণত করার জন্য খুবই উন্নত কৌশল ব্যবহার করছে।’

বিশেষজ্ঞদের বলছেন,  উত্তর কোরিয়া ক্রিপটো মুদ্রা পাচারের সবচেয়ে দক্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি।

‘আমি মনে করি, তাদের একটি সম্পূর্ণ দল রয়েছে, যারা স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার ব্যবহার করে এই অর্থের পথ গোপন করছে এবং বছরের পর বছর ধরে এটি করে আসছে’, বলেন রবিনসন।

ইলিপটিকের বিশ্লেষণ বলছে, বাইবিট-এর চুরি হওয়া অর্থের ‘প্রায় ২০ শতাংশ’ এখন পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ফলে এই অর্থ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয় বলেও মনে করছে ইলিপটিক।

 

তথ্যমতে, গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাইবিট এক্সচেঞ্জের একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তাদের ডিজিটাল ওয়ালেটের ঠিকানা পরিবর্তন করে ফেলেছিল লাজারাস গ্রুপ।

বাইবিট কর্তৃপক্ষ ভেবেছিল, তারা তাদের নিজস্ব ডিজিটাল ওয়ালেটে ৪ লাখ ১ হাজার ইথেরিয়াম মুদ্রা পাঠাচ্ছে। কিন্তু আসলে সেই অর্থ চলে যায় হ্যাকারদের কাছে।

এদিকে বাইবিট-এর সিইও বেন ঝাও নিশ্চিত করেছেন, গ্রাহকদের কোনো অর্থ চুরি হয়নি এবং বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তারা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন।

তবে তিনি জানিয়েছেন, তারা এখন লাজারাস গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। বাইবিট-এর ‘লাজারাস বাউন্টি প্রোগ্রাম’ ইতিমধ্যে জনসাধারণকে চুরি হওয়া অর্থ চিহ্নিত করতে এবং ব্লক করতে উৎসাহিত করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার হ্যাকারদের দক্ষতা এবং তাদের গোপন আর্থিক পথের কারণে পুরো অর্থ ফেরত পাওয়া কঠিন হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো—কিছু ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ অপরাধীদের অর্থ পরিবর্তনে সহায়তা করছে।

উত্তর কোরিয়া কখনো লাজারাস গ্রুপের অস্তিত্ব স্বীকার করেনি। এটি বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্র যা অর্থ উপার্জনের জন্য সরাসরি সাইবার হ্যাকিং পরিচালনা করছে। ২০১৯ সাল থেকে দেশটির হ্যাকাররা ক্রিপটো এক্সচেঞ্জগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে।

২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাজারাস গ্রুপের সদস্যদের ‘সাইবার মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় যুক্ত করেছিল। তবে উত্তর কোরিয়ার মতো বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে বসবাস করা এই হ্যাকারদের গ্রেপ্তার করা কার্যত অসম্ভব।

এক গবেষনায় জানা যায়, ২০২৪ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা একশ ৩৪ কোটি ডলার সমমূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ডিজিটাল মুদ্রা চুরি করেছে, যা বিশ্বব্যাপী চুরি হওয়া মোট ক্রিপ্টোর ৬০ শতাংশ।

ওই বছল বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্রিপ্টো প্ল্যাটফর্ম থেকে চুরি গেছে দুইশো ২০ কোটি ডলার মূল্যের ক্রিপ্টো, যা আগের বছরের তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি।

ব্লকচেইন বিশ্লেষণ কোম্পানি চেইনালাইসিসের গবেষণায় আরও বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্রিপ্টো হ্যাকিং ‘আরও ঘন ঘন হচ্ছে।’

সূত্র- বিবিসি

 

আরবি/ফিজ

Link copied!