পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে মঙ্গলবার (১১ মার্চ) একদল সশস্ত্র বিদ্রোহী একটি যাত্রীবাহী ট্রেন থামিয়ে ৪৫০ জনেরও বেশি যাত্রীকে জিম্মি করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে স্বাধীনতার দাবিতে লড়াই করা বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে।
ঘটনাটি বেলুচিস্তানের সিবি জেলার পাহাড়ি এলাকায় দুপুর ১টার দিকে ঘটে। সেখানে ট্রেনটির একটি স্টেশনে থামার কথা ছিলো। ট্রেনটি ৩০ ঘণ্টারও বেশি দীর্ঘ যাত্রায় কোয়েটা থেকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পেশোয়ারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। বিদ্রোহীরা বেলুচিস্তানের একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ট্রেনটি আটকায় এবং চালককে গুলি করে আহত করে।
দেশটির রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, জাফর এক্সপ্রেস নামের ওই ট্রেনের ৯টি বগিতে ৪৫০ জনের বেশি যাত্রী ছিলেন। দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের বেলুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখাওয়ার পেশওয়ারের উদ্দেশে যাওয়ার সময় সেটি হামলা চালিয়েছেন সশস্ত্র বন্দুকধারীরা।
এদিকে বিএলএ এক বিবৃতিতে জানায়, তারা প্রথমে রেললাইনের পাত খুলে দিয়ে ট্রেন থামায় এবং তারপর যাত্রীদের জিম্মি করে। সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করলে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সশস্ত্র বিদ্রোহীরা জাফর এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটিকে থামিয়ে চালককে গুলি করে আহত করেছে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, সিবি অঞ্চলের সব হাসপাতালকে জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে বেলুচিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। বিদ্রোহীরা অভিযোগ করে আসছে, সরকার ও বিদেশি কোম্পানিগুলো প্রদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে, অথচ স্থানীয় জনগণের ভাগ্যে উন্নতি আসছে না। আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সহিংসতা বেড়েছে।
এর আগে, গত নভেম্বরে বেলুচিস্তানের একটি রেলওয়ে স্টেশনে পাকিস্তানি সৈন্যদের লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালায় এই গোষ্ঠীর সদস্যরা। এতে বেসামরিক পোশাক পরিহিত ১৯ সৈন্যসহ অন্তত ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। ওই সৈন্যরা ছুটি কাটাতে বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেনে চড়ার কয়েক মিনিট আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
২০২৪ সালেই পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলায় ১,৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, জানিয়েছে ইসলামাবাদভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ।
এর আগে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিএলএ বিদ্রোহীরা এক বাস থামিয়ে সাতজন পাঞ্জাবি যাত্রীকে হত্যা করে। ২০২৩ সালে সংগঠনের চালানো সমন্বিত হামলায় অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই জাতিগত পাঞ্জাবি ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :