বায়ু দূষণে সর্বোচ্চ মৃত্যু এশিয়ায়

মো. সায়েম ফারুকী

প্রকাশিত: মার্চ ১১, ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম

বায়ু দূষণে সর্বোচ্চ মৃত্যু এশিয়ায়

ছবি: সংগৃহীত

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নগরায়ণ বাড়ছে। এ কারণে শিল্পায়নের হার বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বিভিন্ন অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত কার্যক্রমের মাধ্যমে বায়ু দূষণসহ নানা ধরনের পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব কার্যক্রমের ফলে পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর বেঁচে থাকার অপরিহার্য উপাদান নির্মল বায়ু নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

বায়ু দূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এ বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে এক প্রতিবেদনে। সেখানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ বেশি। এ তালিকায় বাংলাদেশের পরই আছে পাকিস্তান। দেশটির বায়ুতে ২০২৩ সালে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতি ছিল ৭৩ দশমিক ৭ মাইক্রোগ্রাম। 

জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ৭০ লাখের অধিক মানুষ অপরিণত বয়সে মারা যাচ্ছে, যার মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষ। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বলছে, বর্তমানে পৃথিবীর শতকরা প্রায় ৯১ ভাগ মানুষ নির্ধারিত মাত্রার নির্মল বায়ু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত ২০ টি শহরের ১৯টিই এশিয়া অঞ্চলের। যার ১৩টিই আবার ভারতে। এছাড়া পাকিস্তানের চারটি শহর এবং চীন ও কাজাখস্তানের একটি করে শহর এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। শীর্ষ ২০ শহরের বাকি একটি শহর এশিয়ার বাইরের। মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদের রাজধানী এনজামেনা আছে এই তালিকার ২০ নম্বরে আছে। এছাড়া উত্তর আমেরিকা অঞ্চলের সবচেয়ে দূষিত শহরের সবগুলোর অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে। 

সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বাতাসের মান পর্যবেক্ষণ করে থাকে। বিশেষ করে বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা বা পিএম২.৫-এর উপস্থিতি পরীক্ষা করে তারা। এটি অত্যন্ত ছোট বস্তুকণা হলেও সবচেয়ে বিপজ্জনক দূষণকারী। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, ধূলিঝড় এবং দাবানলের মতো ঘটনাগুলো পিএম২.৫-এর উৎস। এ কণা এতটাই ক্ষুদ্র যে তা মানুষের একটি চুলের প্রস্থের ২০ ভাগের এক ভাগ। এটি খুব সহজেই মানুষের ফুসফুস কিংবা রক্তপ্রবাহে চলাচল করতে পারে। পিএম২.৫ বস্তুকণার কারণে জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ হতে পারে। এ ছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের সঙ্গেও এর সম্পৃক্ততা আছে। এ ক্ষুদ্রকণার সংস্পর্শে এলে ক্যানসার, স্ট্রোক ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। বিষণ্নতা ও উদ্বেগে ভোগার ঝুঁকিটাও উচ্চ। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, পিএম২.৫-এর গড় বার্ষিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় শিল্প শহর বিরনিহাটের বাতাসে গত বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গ্রহণযোগ্য মানের চেয়ে ২৫ গুণের বেশি পিএম২.৫ শনাক্ত হয়েছে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি এবার টানা ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তালিকায় ভারতের স্যাটেলাইট শহর ফরিদাবাদ, লোনি, দিল্লি, গুরুগ্রাম, নয়ডা এবং গ্রেটার নয়ডার নামও রয়েছে। 

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, দূষণের জেরে ভারতীয়দের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। এ সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের শীর্ষ ২০টি দূষিত শহরের মধ্যে ১৩টি ভারতে অবস্থিত। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের বাইরনিহাট এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে। সুইস বায়ু মান প্রযুক্তি সংস্থা আইকিউএয়ারের ২০২৪ সালের বিশ্ব বায়ু মান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি এখনো বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দূষিত রাজধানী শহর হিসাবে রয়ে গেছে। আর ভারত ২০২৪ সালে বিশ্বের পঞ্চম সর্বাধিক দূষিত দেশ হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছে। যদিও ২০২৩ সালে এ তালিকায় ভারতের অবস্থান ছিল তৃতীয়।

তথ্য অনুযায়ী, ভারতে দূষিত বাতাসের কারণে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ মানুষ মারা যান। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথন। এনিয়ে তিনি বলেন, ভারত বাতাসের মানের তথ্য সংগ্রহে অগ্রগতি করেছে কিন্তু পর্যাপ্ত পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। এখন স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে দূষণ কমানোর দিকে নজর দিয়ে জরুরিভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
 

আরবি/আরডি

Link copied!