এক ঐতিহাসিক রায়ে মালয়েশিয়ার আদালত ঘোষণা করেছে যে, দেশটির নারীরা এখন থেকে বিদেশে জন্ম নেওয়া সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার পাবেন। ১৮ বছরের কম বয়সি শিশুরা এই সুবিধা পাবে, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি, যা এখনো অনেক পরিবারকে আইনি অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেছে।
চার বছরের আইনি লড়াইয়ের অবসান
মালয়েশিয়ান পুরুষরা এতদিন বিদেশে জন্ম নেওয়া সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব দেওয়ার সুবিধা পেয়ে আসলেও, নারীরা এই অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এই লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে ‘ফ্যামিলি ফ্রন্টিয়ার্স’ নামের একটি অধিকার সংস্থা ও ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন মা আদালতে মামলা দায়ের করেন। অবশেষে চার বছর পর আদালত তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে হাজারো শিশু সরকারি শিক্ষা, চাকরির সুযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। এতদিন নাগরিকত্ব না পাওয়ায় অনেক শিশু রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়েছিল, কারণ মালয়েশিয়া দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃতি দেয় না।
আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া
ফ্যামিলি ফ্রন্টিয়ার্স-এর প্রধান আইনজীবী গুরদিয়াল সিংহ নিজার এই রায়কে একটি ঐতিহাসিক অর্জন বলে উল্লেখ করেছেন। সংস্থার সভাপতি আদলিন আদম তেওহ বলেন, আজ আমরা উদযাপন করছি- প্রতিটি মালয়েশিয়ান মা ও তাদের সন্তানদের জন্য, যারা আর বৈষম্যের শিকার হবে না।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩,০০০-এর বেশি নাগরিকত্ব আবেদন জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ৮০% অনুমোদন পেয়েছে। তবে ১৮ বছরের বেশি বয়সি সন্তানদের নাগরিকত্ব না দেওয়ায় অনেক পরিবার এখনো সমস্যায় রয়েছে।
২৫ বছর বয়সি মোটরসাইকেল রেসার ও র্যাপার দানিয়াল বোগার্স, যিনি মালয়েশিয়ান মা ও ডাচ বাবার সন্তান, তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, ‘আমি মালয়েশিয়ায় ক্যারিয়ার গড়ার অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু নাগরিকত্ব না থাকার কারণে সেগুলো হাতছাড়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার গত অক্টোবরে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস করে। তবে এতে অনাথ ও পরিত্যক্ত শিশুদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার বিতর্কিত বিধান ছিল। পরবর্তীতে বিতর্কের মুখে এটি বাতিল করা হলেও, স্থায়ী বাসিন্দাদের সন্তান ও আদিবাসী শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়, যা শিশু অধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মালয়েশিয়ান নারীদের বিদেশি স্বামীদের জন্য স্থায়ী বাসিন্দার আবেদনের শর্ত ৫ বছর থেকে কমিয়ে ৩ বছর করা উচিত, যাতে পরিবারগুলোর আর্থিক ও সামাজিক চাপ কমে।
এই রায় মালয়েশিয়ান নারীদের জন্য একটি বড় জয়, তবে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের নাগরিকত্ব সংকটের সমাধান এখনো হয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো দ্রুত সমাধানের দাবি জানিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :