বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে চীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আনুষ্ঠানিকভাবে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীন ঐতিহ্যগতভাবে সব দেশের সরকারপ্রধানদের সফরের আমন্ত্রণ জানায় এবং বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ঢাকার এক হোটেলে সেন্টার ফর অল্টারনেটিভস (সিএ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে চীনের জাতীয় ভাবমূর্তি’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত এ আমন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, চীন সব সময় বাংলাদেশ ও তার জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে অটল। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ড. ইউনূসের চীন সফর: গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ও সম্মেলন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চীন সফরে যাচ্ছেন, যা বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হবে। সফরের অংশ হিসেবে তিনি-
- ২৭ মার্চ চীনের হাইনান প্রদেশে ‘বোয়াও ফোরাম’ কনফারেন্সে অংশ নেবেন এবং উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।
- ২৮ মার্চ বেইজিংয়ের গ্রেট হলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এটি দুই দেশের ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
- চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রিমিয়ার দিং ঝুঝিয়াংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করবেন, যেখানে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে।
- হুয়াওয়ে কোম্পানির উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন এন্টারপ্রাইজ পরিদর্শন করবেন, যা বাংলাদেশ-চীন প্রযুক্তি ও ডিজিটাল খাতে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
- ২৯ মার্চ পিকিং ইউনিভার্সিটি তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে, যেখানে তিনি একটি বিশেষ বক্তৃতা দেবেন।
এরপর চীনের একটি বিমানে করে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসবেন।
বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আরও জানান, চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে আগ্রহী। তিনি বলেন, শুধু জুলাই-আগস্টের মধ্যেই চীনের ১৪টি কোম্পানি বাংলাদেশে ২৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতে এই বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা আশা করি, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল আলোচনার মাধ্যমে যেকোনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠবে।
রোহিঙ্গা সংকট ও চীনের ভূমিকা
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে ইয়াও ওয়েন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিকল্প কোনো সমাধান নেই। চীন এ সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে কাজ করছে। তবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টাও প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে চীনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রতিটি দেশের নিজস্ব গণতন্ত্রের ধরন আছে। চীনের গণতন্ত্র জনগণের কল্যাণে নিবেদিত, এবং আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
এ ছাড়া, অনুষ্ঠানে চীনের বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভূমিকা নিয়েও আলোচনা হয়। এক জরিপ অনুযায়ী, ৬০% বাংলাদেশি মনে করেন চীনের বৈশ্বিক রাজনীতি উন্নয়নকেন্দ্রিক, আর ২৫% মনে করেন চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। তবে কিছু মানুষ চীনের ঋণনীতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক আরও গভীর হবে
এই সফর বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি এবং কৌশলগত সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। চীন আশা করছে, এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং বাংলাদেশ চীনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :