যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমাগত হুমকি ও চাপের মধ্যেও আলোচনায় বসবে না ইরান- এমনটাই সাফ জানিয়ে দিলেন দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তোমরা যা খুশি তাই করো।
মঙ্গলবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পেজেশকিয়ানকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা আমাদের জন্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র নির্দেশ দেবে আর আমরা মেনে নেব। আমি এমন পরিস্থিতিতে আলোচনায় বসবো না।
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও একই ধরনের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, হুমকি দিয়ে ইরানকে আলোচনায় বসানো যাবে না।
তার এই মন্তব্য আসে একদিন পর, যখন ট্রাম্প জানান যে, তিনি ইরানের সঙ্গে নতুন পরমাণু চুক্তির আলোচনার জন্য একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
যদিও ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি ইরানের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রাখতে চান, তবে তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তার প্রথম মেয়াদের মতো সর্বোচ্চ চাপ কৌশল পুনরায় চালু করেছেন। এ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হলো তেহরানকে বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করা এবং দেশটির তেল রপ্তানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও বলেন, ইরানকে দুটি উপায়ে সামলানো যেতে পারে: সামরিকভাবে দমন করা, অথবা একটি চুক্তির মাধ্যমে যাতে তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকানো যায়।
ইরান বরাবরই দাবি করে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং তারা অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) সতর্ক করেছে যে, ইরান দ্রুততার সঙ্গে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা ৯০ শতাংশের কাছাকাছি, অর্থাৎ অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম তৈরি করার পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বকে আরও বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলবে, যা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
২০১৮ সালে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ২০১৫ সালের বহুপাক্ষিক পরমাণু চুক্তি (JCPOA) থেকে সরিয়ে নেন এবং তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। এর ফলে ইরানের অর্থনীতি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ২০১৯ সাল থেকে দেশটি তাদের পরমাণু কর্মসূচির গতি আরও বাড়িয়ে দেয়।
বর্তমানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চাপের কারণে ইরান কঠিন অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে, তবে দেশটি এখনো নিজের অবস্থানে অনড়। এখন প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছাবে, নাকি সামরিক সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে?
সূত্র: এনডিটিভি