ঢাকা বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

যাত্রীদের মুখে ফুটে উঠল ট্রেন ডাকাতির ভয়াবহ বর্ণনা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৫, ০২:০৬ পিএম
ছবিঃ সংগৃহীত

 মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসের দখল নিয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। কাচ্চি বোলান জেলায় পেহরো কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি জায়গায় যাত্রিবাহী ট্রেনটি অপহরণ হয়।
বালুচিস্তানে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়েছেন অন্তত ১৫৫ জন ট্রেনযাত্রী। বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় কোনও মতে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছেন তাঁরা। 


সেই জাফর এক্সপ্রেস থেকে মুক্তি পাওয়া এক যাত্রী শোনালেন তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।
বিদ্রোহীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বুধবার সকালে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেছেন পাকিস্তানের মহম্মদ বিলাল। 
তিনি বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছোনোর জন্য পাহাড়ি ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি। সঙ্গীসাথী, আত্মীয়েরা মাঝরাস্তায় আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
তিনি জানান, তার সঙ্গীসাথী, আত্মীয়েরা কোথায় কী অবস্থায় আছেন, এখনও জানেন না তিনি। আতঙ্কিত বিলাল বলেন, আমরা যে কীভাবে প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছি, তা বর্ণনা করার মতো ভাষা নেই। 
বিলাল তাঁর মায়ের সঙ্গে জাফর এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। মাঝপথে ট্রেনটি আটকায় বিদ্রোহীদের দল। ওই ট্রেনে থাকা আর এক যাত্রী আল্লাহদিত্তা জানান, বিদ্রোহীরা যখন চার দিক থেকে ট্রেনটি ঘিরে ফেলেছিলেন, তখনই একটি বিস্ফোরণের শব্দ কানে আসে। তার পর থেকে শুরু হয় অবিরাম গুলিবর্ষণ। 
মাচ স্টেশনটিকে আহতদের চিকিৎসার জন্য একটি অস্থায়ী হাসপাতালে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সেখানেই ছাড়া পাওয়া বাকি যাত্রীদের সঙ্গে অপেক্ষা করছেন আল্লাহদিত্তা। 
আল্লাহদিত্তার বলেন, আতঙ্কে সবাই সিটের নিচে লুকিয়ে পড়তে শুরু করেন। প্রথমেই জঙ্গিরা পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করে দাঁড় করায়। তাদের বলেছিলাম যে আমি হৃদ্‌রোগী। এটা শুনে তারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে যেতে দেয়। 


অন্য আরেকজন যাত্রী থেকে জানা যায়, সশস্ত্র বন্দুকধারীরা যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন কারা বালুচিস্তান প্রদেশের, আর কারা বাইরের। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর যাত্রীদের সামনেই কয়েকজন সৈন্যকে গুলি করেন বিদ্রোহীরা।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসের দখল নিয়েছিলেন স্বাধীনতাপন্থি সশস্ত্র বালুচ গোষ্ঠী বিএলএ (বালুচ লিবারেশন আর্মি)-র বিদ্রোহীরা। কাচ্চি বোলান জেলায় পেহরো কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি জায়গায় যাত্রিবাহী ট্রেনটি অপহরণ করা হয়। ন’টি কোচবিশিষ্ট ওই ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে শতাধিক বন্দি হন। শুরু হয় পাকিস্তানি সেনাদের উদ্ধার অভিযান। বুধবার ভোরে অনেকক্ষণ চেষ্টার পর অপহৃত ট্রেনটি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ১৫৫ জন যাত্রীকে। 
এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত নিহত হন ২৭ জন বালুচ বিদ্রোহী। উদ্ধার হওয়া বেশির ভাগ যাত্রীকে কোয়েটায় পাঠানো হয়েছে। আহত কয়েকজন যাত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বাকিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে মাচে। 
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স।